আমাদের লড়াই হিন্দু ও মুসলমান - এই দুটি সম্প্রদায়ের মধ্যে নিছক গোষ্ঠিদ্বন্দ্ব নয়৷ এ লড়াই আমার আপনার মাটি - বেটি - রুটি বাঁচানোর লড়াই৷ এ লড়াই ভারতের অখন্ডতা বজায় রাখার লড়াই৷ এ লড়াই ভারতের বিশ্বজনীন মূল্যবোধকে বাঁচিয়ে রাখার লড়াই৷ এ লড়াই আমাদের নিজেদের ভাবপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষার লড়াই৷ এ লড়াই আমার মূর্তি পূজোর অধিকার রক্ষার লড়াই৷ আবার এ লড়াই আমার নাস্তিক হওয়ার অধিকার রক্ষার লড়াই৷ এ লড়াই ভারতের বৈচিত্র্যকে রক্ষা করার লড়াই ৷ রাম - কৃষ্ণ - শঙ্কর - বুদ্ধের ভারতকে বাঁচাতে হলে এ লড়াই লড়তে হবে৷ স্বামীজী - আচার্য্য প্রণবানন্দের ভারতকে বাঁচাতে হলে এ লড়াই লড়তে হবে৷ আপনার আমার মেয়েকে লাভ জেহাদের হাত থেকে বাঁচাতে হলে এ লড়াই লড়তে হবে৷ তাকে কালো বোরখার অন্ধকারে জীবন কাটানোর হাত থেকে বাঁচাতে হলে এ লড়াই লড়তে হবে৷ ধর্মান্ধ, অসহিষ্ণু, মধ্যযুগীয়, অত্যাচারী, নিষ্ঠুর ইসলামের হাত থেকে বিশ্ব মানবতাকে রক্ষা করার জন্য নির্ণায়ক সঙ্ঘর্ষই হোক আজকের যুগধর্ম৷
Friday, March 20, 2015
Tuesday, March 17, 2015
ধর্ম পালনের থেকে আজ ধর্মের সংরক্ষণকে প্রাথমিকতা দিতে হবে
পুকুরে মাছেরা যখন একসাথে থাকে তখন কয়েকটি আগ্রাসী প্রকৃতির মাছ বাকী মাছেদের আক্রমণ করে মেরে ফেলে৷ কে কাকে মারবে, সবক্ষেত্রে তা মাছের আকারের উপরে নির্ভর করে না৷ তা মূলতঃ নির্ভর করে মাছের প্রকৃতি বা স্বভাবের উপরে৷ উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, বোয়াল বা ভেটকী মাছের কথা৷ কোন পুকুরে বোয়াল অথবা ভেটকী মাছ থাকলে সেই পুকুরে অন্য কোন প্রজাতির মাছ থাকতে পারে না৷ এক্ষেত্রে বোয়াল এবং ভেটকী মাছ অন্য মাছদের আক্রমণ করে এবং খেয়ে ফেলে৷ আবার তেলাপিয়া মাছের বংশবৃদ্ধির হার এত বেশী যে তাদের ভীড়ের চাপে পুকুরে অন্য মাছের স্থান এবং খাদ্য-দুইয়েরই অভাব হয়ে পড়ে৷ সমুদ্র তীরবর্তী এলাকার মিষ্টি জলের পুকুরে কাঠকৈ নামের মাছ পাওয়া যায়৷ এরা আকারে ছোট কিন্তু দলবদ্ধ এবং হিংস্র৷ এরা দল বেঁধে অনেক বড় বড় মাছকে শিকার করে৷ পুকুরে এই তিন ধরণের মাছের যে কোন এক প্রজাতির উপস্থিতিই বাকী সব প্রজাতির মাছের অস্তিত্ব শেষ করার জন্য যথেষ্ট৷ আর যদি এরকম কোন মাছ থাকে, যার আকার বড়, যারা দলবদ্ধ, হিংস্র ও আগ্রাসী তাহলে তো আর কথাই নেই৷
এখন অনেকে বলবেন মাছ তো মাছই, সব মাছই সমান, যারা মাছে মাছে পার্থক্য করে তারা অজ্ঞ৷ তাদের এই কথা এক অর্থে সঠিক হলেও তাদের কথা শুনে কেউ যদি একই পুকুরে সাধারণ মাছের সাথে সাথে বোয়াল, ভেটকী ইত্যাদি মাছ চাষ করেন, তাহলে তিনি সর্বস্বান্ত হবেন একথা বলাই বাহুল্য৷ ঠিক তেমন ভাবে যারা বলেন মানুষ তো মানুষই, সব মানুষ সমান, মানুষে মানুষে বিভেদ করা উচিত নয় - তাদের কথা আপাত দৃষ্টিতে সত্যি এবং আকর্ষণীয় মনে হলেও মোটেই বাস্তব সম্মত নয়৷ কারণ সবাই মানুষ হলেও আপনি কি আপনার বাড়ীর ভিতরে আপনার পরিবারের সদস্যদের সাথে একজন চোর, একজন সিরিয়াল কিলার এবং একজন দাগী ধর্ষণকারীকে একসাথে বসবাস করার অনুমতি দেবেন? যদি দেন তাহলে তার পরিণতি কি হবে, তা আশা করি বলে দিতে হবে না৷
মানুষ সবাই সমান হলেও আবার সবাই সমান নয়৷ বাস্তব জ্ঞান, অভিজ্ঞতা এবং স্বচ্ছ ও পূর্বাগ্রহ (bias/pre-motivation) বিহীন দৃষ্টি দিয়ে দেখলে এই পার্থক্য বোঝা যায়৷ বস্তুবাদী(materialistic) অথবা আধ্যাত্মিক(spiritual) - যে কোন ভাবেই ব্যাখ্যা করা হোক না কেন, সব কিছুর মূলতত্ত্ব এক৷ সেই দৃষ্টিতে একটি সূস্থ কুকুর আর একটি পাগল কুকুরের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই৷ কিন্তু তাই বলে কি পাগল কুকুরের সাথে গলাগলি করা কান্ডজ্ঞানের পরিচায়ক হবে? কেউ যদি তা করতে চায় তাহলে সে খালি নিজেরই নয়, আরও অনেকের বিপদ ডেকে আনবে৷
এখন আমাদের সমাজের মধ্যেই কিছু লোকের মনে হচ্ছে যে আমরাই শ্রেষ্ঠ, বাকীরা নিকৃষ্ট৷ জড়, প্রকৃতি, নারী - সবই আমাদের ভোগের জন্য৷ আমরা যা বিশ্বাস করি, সেটাই সঠিক এবং সবাইকে তা ই বিশ্বাস করতে হবে৷ আমরা যে পথে চলতে চাই বাকীদেরকেও সেই পথেই চলতে হবে৷ অন্যথা হলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে অনন্ত কাল ধরে যুদ্ধ করবো৷ তাদের সবাইকে হত্যা করবো৷ তাদের সম্পত্তি লুঠ করবো৷ তাদের মহিলাদের ধর্ষণ করবো, দাসী বানিয়ে খোলা বাজারে নিলাম করবো৷ এটাই পূণ্যের কাজ৷ এটাই স্বর্গ প্রাপ্তির উপায়৷ এটাই ঈশ্বর নির্দিষ্ট পবিত্র কর্তব্য৷ এই কাজ নিষ্ঠার সাথে করলে ঈশ্বর খুশী হবেন এবং আশির্বাদ করবেন৷ এভবেই পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে৷ এ হল ইসলামের মতাদর্শ ৷
পাশাপাশি কিছু লোক মনে করে সবারই চিন্তা-ভাবনা, বিশ্বাস, অভিব্যক্তির স্বাধীনতা আছে যতক্ষণ পর্যন্ত তা বাকীদের উপরে বিরূপ প্রভাব না ফেলছে৷ তারা মনে করে জীব-জড় সম্বলিত এই প্রকৃতি ঈশ্বরেরই ভিন্ন ভিন্ন রূপের বহিপ্রকাশ মাত্র৷ তাই তারা সর্ব জীবে শিব দেখে৷ তাই তারা সঙ্ঘর্ষ নয়, সমন্বয়কেই শান্তির একমাত্র উপায় বলে মনে করে৷ এই চিন্তাধারা হল ভারতের মাটিতে উদ্ভূত সকল মতাদর্শের মূল ভিত্তি৷
এখন প্রশ্ন হলো, উভয়েই মানুষ হলেও উপরোক্ত দুই ধরণের মনুষই কি সমান? উভয় প্রকারের চিন্তা ভাবনাই কি সমান পর্যায়ের? উভয় প্রকারের চিন্তা ভাবনাই কি সমানভাবে সকলের জন্য মঙ্গলকারী? পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠার নিরিখে, মানবের সার্বিক বিকাশের জন্য যোগ্য পরিবেশ তৈরীর নিরিখে দুই ধরণের চিন্তাই কি সমান ভাবে কার্যকারী? নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে বিচার করলে উত্তর হবে 'না'৷
তাহলে সব ধর্মমত সমান, সব ধর্মের সার এক ইত্যাদি কথা প্রচার করে থাকেন, তারা কী যুক্তিতে কথাগুলি বলছেন-তা সর্ব সমক্ষে জিজ্ঞাসা করা কি আমাদের উচিত নয়? তারা যখন বলেন গীতা-কোরাণ-বাইবেলে একই কথা লেখা আছে, তখন কি আমাদের একটু যাচাই করে নেওয়া উচিত নয় যে বক্তা ওই ধর্মগ্রন্থগুলি আদৌ পড়েছেন কি না?
ভারতবর্ষকে ধ্বংস করার জন্য এক বিরাট চক্রান্ত চলছে৷ হিন্দুদের বিভ্রান্ত করে হীনবল করে রাখা হচ্ছে৷ এখানে একই পুকুরে আমাদের মত রুই-কাতলার সাথে বোয়াল-তেলাপিয়ার শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের অবাস্তব স্বপ্ন দেখানো হচ্ছে৷ এর পরিণাম হল সম্পূর্ণ ভারতের ইসলামিকরণ৷ হিংসা আর প্রেম কখনও এক হয় না৷ সঙ্ঘর্ষ আর সমন্বয় কোনদিনও এক হতে পারে না৷ হিংসা ও সঙ্ঘর্ষ হল অধর্ম আর প্রেম ও সমন্বয় হল ধর্ম৷ তবে ধর্মের এই সংজ্ঞা প্রযোজ্য হবে সাধরণ পরিস্থিতিতে ৷ কিন্তু যখনই অধর্ম মাথা তুলবে, ধর্মের অস্তিত্ব বিপন্ন হবে, তখন ধর্ম পালনের থেকে ধর্মের সংরক্ষণকেই প্রাথমিকতা দিতে হবে৷ আর যুদ্ধক্ষেত্রে 'শঠে শাঠ্যং সমাচরেৎ' হল থাম্ব রুল, সে কথা ভগবান শ্রীরাম এবং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আমাদেরকে শিখিয়ে গেছেন৷ অধর্মের বিনাশ করে ধর্ম প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনে হিংসা ও সঙ্ঘর্ষের পথ অবলম্বন করাই যে সব থেকে বড় ধর্ম তা বোঝানোর জন্য ভগবান স্বয়ং বারবার অস্ত্রধারণ করেছেন৷ কখনও নৃসিংহদেব, কখনও রামচন্দ্র হয়ে নিজের হাতে হিরণ্যকশিপু, রাবণ বধ করেছেন৷ কখনও শ্রীকৃষ্ণ হয়ে ভয়ংকর রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে আত্মীয় স্বজনদের হত্যা করতে পান্ডবদের প্রেরণা দিয়েছেন৷ আজ এই দেশ-ধর্ম রক্ষা করতে হলে ভগবান প্রদর্শিত পথেই আমাদেরকে এগিয়ে যেতে হবে৷ এই ধর্মপথ ব্যতীত অন্য কোন পথ নেই৷
Sunday, March 15, 2015
এই ভন্ডামির শেষ কোথায়?
যদা যদা হি ধর্মস্য গ্লানির্ভবতি ভারতঃ
অভ্যুত্থানমধর্মস্য তদাত্মানম্ সৃজাম্যহম্৷
পরিত্রাণায় সাধুনাং বিনাশায়চ দুষ্কৃতাং
ধর্মসংস্থাপনার্থায় সম্ভবামি যুগে যুগে৷৷
যখন যখন ধর্ম পালন গ্লানির বিষয় হয়ে দাঁড়াবে এবং অধর্মের অভ্যুত্থান ঘটবে তখন তখন সাধুদের পরিত্রাণ এবং দুষ্কৃতিদের বিনাশ করতে স্বয়ং ভগবান আবির্ভূত হবেন৷ কথাটিতে বিশ্বাস করলেও এর মর্মার্থ উপলব্ধি করার চেষ্টা খুব কম লোকই করেন৷ বেশীর ভাগ কৃষ্ণভক্তের বিশ্বাস ভগবান আসবেন, দুষ্কৃতিদের শাস্তি দেবেন আর স্বর্গে পাড়ি দেবেন৷ আর আমরা খোল-করতাল বাজিয়ে তারস্বরে সঙ্কীর্ত্তন করে ভগবানের ভজনা করবো৷ কাজ শেষ করে চলে যাওয়ার পর ভগবানের দুষ্টদমনের লীলাটা বেবাক্ ভুলে যাবো৷ তবে রাসলীলাটা ভুলে গেলে চলবে না৷ ভগবানের জীবনের ওই অংশটা বাদ দিয়ে আর কিছুই তো গ্রহণ করার যোগ্যতা বা প্রবৃত্তি, কোনটাই আমাদের নেই৷
সমাজে যখন মূল্যবোধের পরিবর্তন হয়, সততা, ন্যায়, পরার্থপরতা প্রভৃতি গুণগুলির অবমূল্যায়ন করা হয় তখনই উপরোক্ত গুণসম্পন্ন ধার্মিক ব্যক্তিদের মান-মর্যাদা থাকে না৷ ধর্মপালন গ্লানির বিষয় হয়ে দাঁড়ায়৷ পাশাপাশি ব্যক্তিস্বার্থ, অন্যায়, মিথ্যা - এইগুলি হয়ে দাঁড়ায় জীবনযাত্রা নির্বাহের মূল সাধন, তখনই অধর্মের অভ্যুত্থান ঘটে৷ আজ আমাদের সমাজে ধার্মিক ব্যক্তিরা বোকা এবং বাস্তববোধহীন বলে গণ্য হচ্ছেন৷ আর অসৎ পথে, অন্যকে শোষণ করে যারা সম্পন্ন হয়ে উঠেছেন তারাই আজ আইকন৷ আজ সম্মান ও মর্যাদার এই মাপকাঠিটা কিন্তু আমরাই স্থাপন করেছি৷ তাই আমাদেরকে অধর্মের পৃষ্ঠপোষক বললে কি কোন ভুল হবে? তাই আজকে যদি সেই মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে ভগবান স্বয়ং আবির্ভূত হন, তাহলে তাঁর রোষানলের শিকার আমরা ছাড়া আর কে হবে?
তাছাড়া ভগবান তো সর্বশক্তিমান৷ এই সমগ্র সৃষ্টির নিয়ন্ত্রক তিনি৷ তাহলে তাঁর প্রতিশ্রুতি রক্ষা করার জন্য তাঁকে মানুষরূপে মর্ত্যলোকে অবতীর্ণ হতে হবে কেন? পন্ডিতরা বলবেন লোকশিক্ষার জন্য৷ শিক্ষাটা কি? মানুষের সমস্যার সমাধান মানুষকেই করতে হবে বলে তাঁর বিধান৷ তিনি স্বয়ং এই বিধানের অমর্যাদা করতে চান না বলেই তিনি মানুষরূপে জন্ম নিয়ে কর্তব্য পালন করেন৷ অর্থাৎ ধর্মের রক্ষা আর অধর্মের বিনাশের দায়িত্ব মানুষেরই অর্থাৎ আমাদেরই৷ তাই আমরা শ্রী রামচন্দ্রকে দেখেছি বনবাসী-গিরিবাসীদের সঙ্গে নিয়ে রাবণবধ করতে৷ মহাভারতের যুদ্ধে শ্রীকৃষ্ণকে দেখেছি অস্ত্রধারণ না করার শপথ নিতে৷ আর আমরা একদিকে অধর্মের পথে চলছি, অধর্মকে সংরক্ষণ করছি, অধর্মকে নীরবে সহ্য করছি৷ অপরদিকে আমাদের থেকে শক্তিশালী দুষ্কৃতিদের হাত থেকে পরিত্রাণের আশায় ভগবানের শরণাপন্ন হচ্ছি৷ এই ভন্ডামির শেষ কোথায় তা সম্ভবতঃ স্বয়ং ভগবানও বলতে পারবেন না৷
Sunday, March 8, 2015
আইসিস, তালিবানদের বর্বরতাই কি তৎকালীন ভারতে মুসলিমদের অত্যাচারের প্রকৃষ্ট প্রমাণ নয়?
আফগানিস্তানে পাহাড়ের গায়ে খোদাই করা সুবিশাল সেই বুদ্ধমূর্তি, যাকে ওয়ার্লড হেরিটেজ সাইট হিসেবে ঘোষণা করেছিল ইউনেস্কো, শান্তির ধর্ম ইসলামের নামে সভ্যতার ইতিহাসের অন্যতম সেই প্রতীক ধ্বংস করেছিল তালিবানরা। এবার ইরাকে একই ভুমিকায় আইসিস৷ সুপ্রাচীন অ্যাসিরিয় সভ্যতার রাজধানী নিমরুদের অমূল্য সব স্থাপত্য, মূর্তি, লিপি, ভেঙে-গুঁড়িয়ে মাটিতে মিশিয়ে দিল এই জঙ্গিরা। ধ্বংস করে ফেলা হল খ্রীষ্টের জন্মের তেরোশ বছর আগেকার অ্যাসিরিয় সভ্যতার নিদর্শন। মুছে গেল মানুষের সভ্যতার আরও এক সুপ্রাচীন অধ্যায়। অ্যাসিরিয়ার রাজধানী নিমরুদের ধ্বংসস্তূপ থেকে বহু যুগের চেষ্টায় প্রত্নতাত্ত্বিকেরা উদ্ধার করেছিলেন সেই সময়কার বহু মূর্তি , ভাস্কর্য ও কিউনিফর্ম লিপি। সেগুলি থেকে ধাপে ধাপে পুনর্নির্মাণ করা হয়েছিল মানুষের সুপ্রাচীন সভ্যতার ইতিহাস। মসুলের কাছে এক মিউজিয়মে রাখা ছিল সেই সব অমূল্য উদাহরণ। ইতিহাসের সেই সব নিদর্শন একে একে গুঁড়িয়ে মাটিতে মিশিয়ে দেওয়া হল ইসলাম প্রতিষ্ঠার লক্ষে। বড় বড় হাতুড়ি, ইলেকট্রিক ড্রিল নিয়ে এসে ভেঙে ফেলা হল রাজা আসুরবানিপালের মূর্তি। কত সব মূর্তি, ভাস্কর্য, মুখের আদল গুঁড়িয়ে ফেলা হল কয়েক ঘণ্টায়, যেগুলি তৈরি করার মত দক্ষতায় পৌছতে মানুষকে চেষ্টা করতে হয়েছে কয়েক শতাব্দী ধরে। নিমরুদ থেকে পাওয়া গিয়েছিল দু ডানাওয়ালা সিংহের মূর্তি। ইতিহাসের ধূলো ঘেঁটে জানা গিয়েছিল সেই মূর্তি গড়া হয়েছিল খ্রীষ্টপূর্ব নবম শতকে। গুঁড়িয়ে ফেলা হয়েছে সেই মূর্তিও।
বিশ্বের তাবড় বুদ্ধিজীবিমহল চিৎকার করে গলা ফাটাচ্ছে যে এই সন্ত্রাসের সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই৷ ওদিকে ইসলামের মূল গ্রন্থ কোরাণের আয়াতগুলি, তাদের সমাজের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত আঞ্জেম চৌধুরী ও জাকির নাইকের মত ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের বক্তব্য এবং মুসলমানদের অতীত ও বর্তমান বিধ্বংসী কার্যকলাপ চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে ইসলামের নির্মম, নিষ্ঠুর সত্যটাকে৷ উদাত্ত কন্ঠে ঘোষণা করছে যে তালিবান, আইসিস, বোকোহারাম যা করছে সেটাই বিশুদ্ধ ইসলাম৷ এই সত্যদর্শন করার জন্য দার্শনিকের প্রজ্ঞা দরকার হয় না৷ দরকার খোলা চোখ আর নিজের চোখের উপর পূর্ণ বিশ্বাস৷ পেট্রোডলারজীবি, রাজনৈতিক নেতাদের উচ্ছিষ্টভোগী বুদ্ধিজীবিদের চোখ দিয়ে দেখলে সত্যকে দেখা যাবে না৷ কোরাণ পড়ুন৷ দেখবেন কোরাণে বর্ণিত পথনির্দেশ কিভাবে বাস্তবে রূপায়িত করছে আইসিস৷ ইসলাম কি? কোরাণ- হাদিশের তত্ত্ব ইসলাম না কি বুদ্ধিজীবিদের বকোয়াস্ ইসলাম ? তালিবান, আইসিসরা যা করে চলেছে তাকে সম্পূর্ণরূপে সমর্থন করে ইসলামের তত্ত্ব৷ মাঝখান থেকে যারা বলে চলেছে ইসলামের সাথে এই সন্ত্রাসের কোন সম্পর্ক নেই, তারা বিশ্ববাসীকে বিভ্রান্ত করছে যাতে তালিবান বা আইসিসের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী প্রতিরোধ তৈরী হলেও ইসলাম সামগ্রিকভাবে সঙ্কটগ্রস্ত না হয়৷ এদের ইসলামের বেতনভোগী এজেন্ট ছাড়া আর কী বলা যায়?
ইসলামের রণকৌশল হল যেখানে এবং যতদিন তারা দুর্বল থাকবে , সেখানে ততদিন তারা মিলেমিশে থাকবে বাকীদের সাথে৷ আর যেখানে পর্যাপ্ত শক্তি অর্জন করবে, সেখানেই শুরু করবে ইসলামীকরণের অভিযান- ডাইরেক্ট অ্যাকশন৷ সব ফ্রন্টে একসাথে লড়াই হবে না৷ যারা লড়াই করছে না, তারা গোপনে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে যারা লড়াই করছে তাদের প্রতি৷ পাশাপাশি প্রয়োজন হলে প্রকাশ্যে মৃদু ভাষায় তিরস্কার করবে সন্ত্রাসবাদীদের৷ এই উল্টোপুরাণ শুনে বিভ্রান্ত হওয়ার কিছুই নেই৷ কারণ এটাও ইসলাম অনুমোদিত রণকৌশল৷ ইসলামের পরিভাষায় একে 'তাকিয়া' বলা হয়৷ আর এই সম্পূর্ণ প্রসেস্ হল জেহাদ৷ জেহাদ প্রতিটি মুসলমানের জন্য পবিত্র কর্তব্য, জন্নতে যাওয়ার শর্টকাট রাস্তা ৷ সারমর্ম হল, যারা কোরাণে সম্পূর্ণরূপে বিশ্বাসী তারাই মুসলমান, যারা মুসলমান তারাই জেহাদী, যারা জেহাদী তারাই তালিবান, আইসিসদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সহচর৷ জেহাদের এই মডেল আমাদের কাছে নতুন নয়৷ যেখানে মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ সেখানেই হিন্দুর উপরে অত্যাচার, আর যেখানে মুসলমানরা দুর্বল, সেখানে দাঁত কেলিয়ে মিলেমিশে থাকা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মিছিলে সামনের সারিতে অবস্থান৷ কাশ্মীর থেকে শুরু করে বাংলার মুর্শিদাবাদ, মালদা, দিনাজপুর, নদীয়া, দুই ২৪ পরগণা, বীরভূম-সর্বত্র একই চিত্র৷ গত লোকসভা নির্বাচনে মোদীর বিরুদ্ধে খড়্গহস্ত মুসলমানরাই আজকে রাতারাতি মোদীভক্ত হয়ে দলে দলে বিজেপিতে যোগ দিচ্ছে৷ তাকিয়া তাকিয়া তাকিয়া ! রাম পুণ্যানির মত বামপন্থী বুদ্ধিজীবিরা আমাদের আজও বুঝানোর চেষ্টা করেন যে আমাদের দেশের মুসলমান শাসকেরা মন্দির ধ্বংস করেছিলেন, তরবারির সামনে ধর্মান্তরিত করেছিলেন, গণহারে কাফের হত্যা করেছিলেন - এসব কথা সত্য নয়৷ এসব হিন্দু মৌলবাদীদের বানানো গল্প৷ তাদের কথা যে কতটা মিথ্যা তা প্রমাণ করার জন্য অতীতে যাওয়ার কি কোন দরকার আছে? বর্তমানের আইসিস, তালিবানদের বর্বরতাই কি তৎকালীন ভারতে মুসলিমদের অত্যাচারের প্রকৃষ্ট প্রমাণ নয়?
তাই আজ নিজের চোখ দিয়ে দেখুন, দেখবেন আগতপ্রায় ধ্বংসলীলার ভয়ংকর চিত্র৷ নিজের কান দিয়ে শুনুন, শুনতে পাবেন মহাতান্ডবের পদধ্বনী৷
Friday, March 6, 2015
ধর্ষণে অভিযুক্ত শরিফুদ্দিনকে জেল থেকে ছিনিয়ে নিয়ে মৃত্যুদন্ড দিল জনতার আদালত
ধর্ষণে অভিযুক্ত শরিফুদ্দিনকে জেল থেকে ছিনিয়ে নিয়ে মৃত্যুদন্ড দিল জনতার আদালত৷ গত ৫ ই মার্চ নাগাল্যান্ডের ডিমাপুর শহরের ঘটনা৷ অভিযোগ, গত ২৪ ফেব্রুয়ারী ডিমাপুরের এস ডি জৈন কলেজের এক ছাত্রীকে মাদকদ্রব্য খাইয়ে দফায় দফায় ধর্ষণ করে এই শরিফুদ্দিন৷ ধর্ষিতার অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ গ্রেপ্তার করে শরিফুদ্দিনকে৷ ওই দিনই ডাক্তারী পরীক্ষা হয় মেয়েটির৷ ৫ দিন পুলিশ হেপাজতের পর জেল হাজতে পাঠানো হয় অভিযুক্তকে৷
এই পর্যন্ত ঘটনার মধ্যে কোন বৈচিত্র নেই৷ আমাদের রাজ্যে এরকম ঘটনা আকছাড় হচ্ছে এবং সেগুলোর খবর অভিযুক্ত জেলে যাওয়ার পরেই ধামাচাপা পড়ে যায়৷ শেষ পর্যন্ত দোষীদের কি পরিণতি হল কেউ তার খোঁজ রাখে না৷ কামদুনীর ঘটনায় অভিযুক্তদের বিচারের কারেন্ট স্টেটাস কি, তার খবর ক'জন জানে? বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই জামিন পেয়ে যায় অপরাধীরা৷ সে খবর কোথাও ছাপা হয় না৷ কিছু কিছু ক্ষেত্রে শাস্তি হলেও তা হয় কয়েক বছর জেল খাটার শাস্তি, বড়জোর যাবজ্জীবন৷ তাতে ধর্ষিতার প্রতি সুবিচার করা হল বলে অনেকে মনে করতে পারেন৷ কিন্তু এতে ধর্ষকের অপরাধবোধ বা অনুশোচনা বিন্দুমাত্র হয় বলে আমি মনে করি না৷ আমি যে সঠিক, তার প্রকৃষ্ট প্রমাণ নির্ভয়া কান্ডে ধৃতদের একজনের সাক্ষাৎকার, যা নিয়ে এখন গোটা দেশ তোলপাড়৷ তাছাড়া আমার মতে এই শাস্তি হল গুরু পাপে লঘুদন্ড৷ এই শাস্তির ভয় ধর্ষণকারীদের নিবৃত্ত করবে বলে যারা মনে করেন, তারা মূর্খের স্বর্গে বাস করছেন৷ কারণ দুর্নীতির জমানায় জেলখানা যে আর কষ্টের জায়গা নয়, যাদের সামান্য অভিজ্ঞতা আছে তারা জানেন৷ আর টাকা এবং রাজনৈতিক ক্ষমতার জোরে জামিন নিয়ে বুক ফুলিয়ে বাইরে ঘুরে বেড়ানো আজ বিশেষ কঠিন কাজ নয়৷ তাই সহজ কথায় বলতে পারি যে যতক্ষণ পর্যন্ত দুর্নীতিকে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত বর্তমান বিচার ব্যবস্থায় অপরাধীকে উপযুক্ত শাস্তিও দেওয়া সম্ভব নয় এবং সমাজকে অপরাধমুক্ত করাও সম্ভব নয়৷
এই নিরাশা যে শুধু আমার নয়, এযে গোটা দেশের তা প্রমাণ করল নাগাল্যান্ড৷ দেশের আইন, বিচার ব্যবস্থার প্রতি চরম অনাস্থা থেকে উদ্ভুত ক্ষোভ সেদিন অমানুষ, নৃশংস পশুতে পরিণত করে তুলল লাজুক, নম্র কিন্তু স্বাভিমানী নাগা মানুষগুলোকে৷ জেল থেকে ছিনিয়ে নিয়ে তারা নৃশংসভাবে হত্যা করল ধর্ষককে৷ শরিফুদ্দিনকে প্রকাশ্য রাস্তায় ফাঁসী দিয়ে ফেটে পড়ল পৈশাচিক উল্লাসে৷ এই ঘটনায় বিশ্বমানবতা কতটা সংকটগ্রস্ত হল তা হয়তো মানবতাবাদের ধ্বজাধারীরা বলতে পারবেন৷ তবে আমি এইটুকু হলফ করে বলতে পারি যে আগামী কয়েকটা বছর নাগা মহিলারা এতটা সুরক্ষিত অনুভব করবেন যা দেশের কোন ফৌজ তাঁদের কোনদিন দিতে পারে নি বা পারবে না৷ আর এই শরিফুদ্দিনরা নাগা মেয়েদের দিকে কয়েক বছর চোখ তুলে তাকাতেও ভয় পাবে৷
ঘটনাটা সম্পর্কে বোদ্ধারা অনেক মতামত অবশ্যই দেবেন, দেওয়া শুরুও করেছেন৷ তবে যেটা ঘটেছে সেটা ঠিক না ভুল সে সম্পর্কে যারা ঠান্ডা ঘরে বসে তাদের বেদ-পুরাণ উল্টে পাল্টে বিচার করে মতামত দিচ্ছেন, তাদের মতামতের তুলনায় আমার কাছে নির্ভয়া এবং কামদুনীর শিপ্রার আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের মতামত অনেক বেশী দামী৷ নির্ভয়া, শিপ্রাদের মানবিক অধিকারকে যারা পশুর মত ছিঁড়ে খায়, তাদের সাথে কিসের মানবিক ব্যবহার? সর্বোপরি নাগারা তাদের সমাজের একটি মেয়ের সম্ভ্রমহানীতে যেভাবে পাগল হয়ে উঠেছে তা অনুসরণ যোগ্য৷ এই সংবেদনশীলতা আমাদের সমাজে সঞ্চারিত হোক-ভগবানের কাছে এই প্রার্থনা করি
Thursday, March 5, 2015
মহারাষ্ট্র সরকারের এই সাহসী পদক্ষেপ কি ভারতের রাজনীতিতে নতুন যুগের বার্তা নিয়ে এলো?
মহারাষ্ট্র অ্যানিমল প্রিভেনশন অ্যাক্ট (এমএপিএ) অনুযায়ী এই রাজ্যে সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ হল গোরু, ষাঁড়, বলদ, বাছুর হত্যা। রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় সোমবারই এই নিষেধাজ্ঞা জারির বিষয়ে তাঁর সম্মতি জানিয়েছেন। এই আইনের অমান্য করলে শাস্তি অজামিন যোগ্য ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড। মহারাষ্ট্রে পশুহত্যা বিরোধী আইনে আগে এই সাজার মেয়াদ ছিল ছয় মাস। জরিমানার টাকার অঙ্কও ১ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১০ হাজার করা হয়েছে।
১৯৯৫ সালে বিজেপি ও শিবসেনার জোট সরকার এমএপিএ-এর অধীনে ষাঁড়, বাছুর হত্যা বন্ধ করতে চেয়ে একটি অ্যামেন্ডমেন্ট আনতে উদ্যোগী হয়। বিধানসভায় এই বিল পাশ হওয়ার পরে ১৯৯৬ সালে কেন্দ্রের কাছে সম্মতি জানানোর জন্য এই বিল পাঠানো হয়। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফ থেকে সোমবার মহারাষ্ট্রের রাজ্যপালের কাছে একটি চিঠি আসে। এই চিঠিতে জানানো হয়েছে ভারতীয় সংবিধানের ২০১ নম্বর ধারা অনুযায়ী এই বিষয়ে সম্মতি জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি।
পাশাপাশি সরকারী চাকুরী এবং শিক্ষাক্ষেত্রে মুসলমানদের জন্য ৫% সংরক্ষণের যে অধ্যাদেশ এনেছিল পূর্ববর্তী কংগ্রেস-এন সি পি সরকার, তাকেও সম্পূর্ণরূপে খারিজ করে দিয়েছে বর্তমান দেবেন্দ্র ফড়নবিস সরকার৷
বিজেপি নেতৃত্বাধীন মহারাষ্ট্র সরকারের এই সিদ্ধান্ত বর্তমান রাজনৈতিক ধারার সম্পূর্ণ বিপরীতে গৃহীত একটি ব্যতিক্রমী এবং সাহসী সিদ্ধান্ত৷ এই সিদ্ধান্ত একদিকে যেমন মহারাষ্ট্রসহ সারা ভারত তথা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা হিন্দুদের মনে এক আশার সঞ্চার করবে , পাশাপাশি হিন্দুদের উপরে এক বিশাল দায়িত্বও অর্পণ করবে ৷ এই সিদ্ধান্তের প্রভাব নিশ্চিতভাবে মহারাষ্ট্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না৷ এর ঢেউ আছড়ে পড়বে ভারতের সর্বত্র৷ হিন্দু সেন্টিমেন্টকে সম্মান জানিয়ে এত বড় পদক্ষেপ অবশ্যই দেশের হিন্দুদের মনোবলকে যথেষ্ট পরিমাণে চাঙ্গা করবে৷ দেশব্যাপী হিন্দুদের অনুভব হবে যে নরেন্দ্র মোদীকে হাত খুলে ভোট দিয়ে আমরা ভুল করি নি৷ পাশাপাশি বিজেপি-র কাছে হিন্দুদের আশা-আকাঙ্ক্ষার মাত্রাটাও অনেকটা বেড়ে যাবে৷ এক্ষেত্রে হিন্দুদের কাছে বিজেপিও কি কিছু আশা করবে না? তাই হিন্দুকে আজ দেওয়া নেওয়ার এই খেলায় সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখাতে হবে৷ এই পদক্ষেপের উপযুক্ত প্রতিদান বিজেপি-র অবশ্যই প্রাপ্য৷ সেই প্রতিদান দেওয়ার দায়িত্ব হিন্দু সমাজকে নিতে হবে৷ গত লোকসভা ভোটের মত আগামী বিভিন্ন স্তরের নির্বাচনগুলিতে প্রমাণ করতে হবে যে এদেশে ভোটে জিততে হলে আর মুসলিম তোষণ করতে হয় না৷ যে দল হিন্দু হিতের কাজ করবে, এদেশে একমাত্র তারাই রাজ করবে৷ এদেশের রাজনীতিতে মুসলিম বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তি এবং তাদের দোসর সেক্যুলারবাদীদের পায়ের তলায় আজ আর মাটি নেই৷ কিন্তু এজন্য বিজেপিকেও হিন্দুর বিশ্বাসের মর্যাদা দিতে হবে৷ তাই আরও কয়েকটি ইস্যুতে বিজেপিকে সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে হবে৷ সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল - জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, অনুপ্রবেশ আটকানো, ইউনিফর্ম সিভিল কোড ইত্যাদি৷ আজকে বিজেপি যদি দেশরক্ষা, হিন্দুরক্ষার জন্য অত্যন্ত আবশ্যক এই সমস্ত ইস্যুতে সস্তা রাজনীতির ঊর্দ্ধে উঠে সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে পারে, হিন্দুরাও বিজেপিকে বিমুখ করবে না৷ তবে একথা বলতে কোন দ্বিধা নেই যে মহারাষ্ট্র সরকারের এই পদক্ষেপ বিজেপি-র আদর্শের প্রেরণাতেই হোক বা রাজনৈতিক রণকৌশলগত কারণেই হোক, হিন্দুর জন্য উত্তম৷ কমপক্ষে এখান থেকে হিন্দু তোষণের রাজনীতির শুভারম্ভ তো হলো!
Wednesday, March 4, 2015
হিন্দু – মুসলিম ঐক্য সম্পর্কে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ
ভারতবর্ষের এমনই কপাল যে, এখানে হিন্দু – মুসলমানের মত দুই জাত একত্র হয়েছে – ধর্মমতে হিন্দুর বাধা প্রবল নয়, আচারে প্রবল; আচারে মুসলমানের বাধা প্রবল নয়, ধর্মমতে প্রবল ৷ এক পক্ষের যে দিকে দ্বার খোলা, অন্য পক্ষের সে দিকে দ্বার রুদ্ধ ৷ এরা কি করে মিলবে? নান্যঃ পন্থা বিদ্যতে অয়নায় ৷
…………….কালান্তর; পৃষ্ঠা – ৩১৩
দেশবিভাগে মুসলিম লীগের অন্যতম শরিক অনুসূচিত জাতির তত্কালীন অবিসংবাদিত নেতা যোগেন্দ্রনাথ মন্ডলের উপলব্ধি
“ইসলামের নামে কি আসছে পাকিস্তানে ? ….পাকিস্তান হিন্দুদের জন্য একটা অভিশপ্ত স্থান এবং হিন্দুদের থাকার সম্পূর্ণ অযোগ্য। …. তারা হিন্দু ধর্মাবলম্বী। এছাড়া অন্য কোনো অপরাধ তাদের নেই। মুসলিম লীগ নেতারা বারংবার বিবৃতি দিয়ে জানাচ্ছে যে, পাকিস্তান মুসলিম রাষ্ট্ররূপে জন্মগ্রহণ করেছে এবং মুসলিম রাষ্ট্ররূপেই সে বেড়ে উঠবে।…..মহান শরীয়ত নির্দেশিত রাষ্ট্রব্যবস্থায় শাসন ক্ষমতা শুধুমাত্র মুসলমানদের হাতেই থাকবে। হিন্দু এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুরা সেখানে হবে জিম্মি। এই সব জিম্মিরা রাষ্ট্রের কাছ থেকে তাদের নিরাপত্তা এবং বাঁচার অধিকার পেতে কিছু মূল্য দিতে বাধ্য থাকবে। মিঃ প্রাইম মিনিস্টার, অন্য যে কোনো মানুষের থেকে আপনিই ভালো জানেন কি সেই মূল্য। গভীর উত্কন্ঠা এবং দীর্ঘ দিন ধরে চিন্তা ভাবনা করে আমি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হিয়েছি যে, পাকিস্তান হিন্দুদের বসবাসের জায়গা নয়। সেখানে তাদের ভবিষ্যত তমসাচ্ছন্ন; তাদের জন্য অপেক্ষা করছে ধর্মান্তরিতকরণ অথবা নিশ্চিত অবলুপ্তির করল গ্রাস। ”
…………. যোগেন্দ্রনাথ মন্ডল
দেশরক্ষায় চাই সবার অংশগ্রহণ
আগেই বলেছি যে ভারতবর্ষ বিশুদ্ধ হিন্দুরাষ্ট্র এবং একমাত্র হিন্দুরাই এদেশের রাষ্ট্রীয় বা জাতীয় সমাজ। পাশাপাশি ভারতে বসবাসকারী অহিন্দুরা আইন অনুসারে এদেশের নাগরিক হলেও কখনোই রাষ্ট্রীয় বা জাতীয় বলে বিবেচিত হতে পারে না। তাহলে বাস্তব এটাই যে ভারতের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৮০ ভাগ হিন্দু শতকরা ২০ ভাগ এমন একটি জনগোষ্ঠীর সাথে সহাবস্থান করছে যারা এদেশের রাষ্ট্রীয় নয়। বরং এই জনগোষ্ঠীর এক বিরাট অংশ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবেরাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপে লিপ্ত আছে এই কথা বললে অত্যুক্তি করা হবে না। ছলে বলে কৌশলে ভারতে ইসলামিক শাসন প্রতিষ্ঠা করার এক গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। ভারতে বসবাসকারী মুসলমানদের সবাই এই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত – একথা বলা যায় না কিন্তু একথা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই যে, রাষ্ট্রবিরোধী কাজে লিপ্ত মুসলমানদের বিরুদ্ধে মুসলিম সমাজ থেকে কোনো আওয়াজ উঠছে না। নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য মারমুখী হয়ে রাস্তায় নামতে অভ্যস্ত মুসলিম সমাজ এ বিষয়ে একদম নিশ্চুপ কেন – তা বুঝতে বেশি বুদ্ধির প্রয়োজন হয়না।
আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতেই এই দেশ ভাগ হয়ে ছিল। সেই সময় যারা পাকিস্তানের দাবিতে “ডাইরেক্ট অ্যাকশন” – এর নামে ভারতের মাটিকে রক্তে রাঙিয়ে দিয়েছিল, তাদের সিংহভাগ স্বপ্নের পাকিস্তান সৃষ্টি হওয়ার পরেও এই ‘না-পাক’ ভারতেই থেকে গিয়েছিল। তাহলে ১৯৪৭ সালের ১৪ই আগস্ট পর্যন্ত যারা ভারতের মাটিকে ‘না পাক’ মনে করত, ঠিক পরের দিন অর্থাৎ ১৫ ই আগস্ট থেকে কোন্ জাদুমন্ত্রে তারা এদেশের দেশভক্ত নাগরিক হয়ে গেল তা একমাত্র আমাদের দেশের রাজনৈতিক নেতারা এবং সেকুলারিজমের ধ্বজাধারীরাই বলতে পারবেন। অতএব বাস্তব এটাই যে দেশ ভাগ হলেও দেশভাগের বীজ কিন্তু এদেশের মাটিতেই থেকে গেল। সেই বীজ আজ মহীরূহে পরিণত হয়েছে।সেই বীজ হল ইসলামের সর্বোচ্চ আদর্শগুলির অন্যতম – ‘দারুল ইসলাম’।
ইসলামে এই মহান (?) আদর্শে বিশ্বাসীরা আজও এই দেশকে দারুল ইসলামে পরিণত করতে সদাসচেষ্ট। আর এই স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে তাদের প্রধান সহায়করা হলেন এদেশের ভোটভিক্ষু রাজনীতিবিদরা এবং সেকুলার বুদ্ধিজীবিরা।ভারতবর্ষকে দারুল ইসলামে পরিণত করতে যে কর্মসূচীর বাস্তবায়ন এখানে প্রতিনিয়ত চলছে, সেগুলিকে ভালোভাবে না জানলে এবং না বুঝলে এই ষড়যন্ত্রের মোকাবিলা করা যাবে না। তাই এই গভীর ষড়যন্ত্রের প্রধান কয়েকটি সূত্র আমি এই লেখার মাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টা করব।
অস্বাভাবিক জনসংখ্যা বৃদ্ধি : ভারতের সংবিধানের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে আইনসম্মত উপায়ে ভারতকে দখল করার এ এক অমোঘ অস্ত্র। আমরা জানি যে কাশ্মীর আজ ভারতে থেকেও ভারতে নেই। কারন মুসলিম জনসংখ্যা ক্রমাগত বাড়াতে বাড়াতে অবশেষে সংখ্যালঘু হিন্দুদের বিতাড়িত করার মাধ্যমে কাশ্মীরকে হিন্দুবিহীন করে ফেলা হয়েছে।আজ ভারতরাষ্ট্রের শাসন সেখানে নখদন্তহীন শার্দুলের হম্বিতম্বিতে পরিণত হয়েছে। ‘কাশ্মীর ভারতের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ’ – মাঝে মাঝে এই হুঙ্কার ছাড়া ভিন্ন কাশ্মীরের অন্য কোন বিষয়ে নাক গলানোর ক্ষমতা ভারতের শাসনকর্তাদের নেই। এই ‘কাশ্মীর মডেল’ সম্পূর্ণ ভারতব্যাপী ছড়িয়ে দিতে হলে জনসংখ্যা বাড়াতে হবে, ভারতের জনচরিত্র (Demography) বদলে দিতে হবে। এই কাজে আইনগত কোন বাধা নেই। তাই এই কাজ চলছে বিনা বাধায়।
অনুপ্রবেশ : অরক্ষিত সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশ থেকে দলে দলে অবৈধভাবে বাংলাদেশী নাগরিকরা ঢুকে পড়ছে এদেশে। সঙ্গে ঢুকছে বাংলাদেশ থেকে তাড়া খাওয়া ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসবাদীরা। ভোটভিক্ষু, দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনৈতিক নেতাদের বদান্যতায় এদেশের নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র হাসিল করে সহজেই তারা ছড়িয়ে পড়ছে দেশব্যাপী। দিল্লী, মুম্বাই, চেন্নাই থেকে শুরু করে জয়পুর, বাঙ্গালোর পর্যন্ত ভারতের সমস্ত এলিট সিটি তে ছড়িয়ে আছে এদের অসংখ্য বস্তী। কোলকাতা এবং এর শহরতলীতেও গড়ে উঠছে প্রচুর অবৈধ বস্তী। এদের গায়ে হাত দেওয়ার ক্ষমতা কারো নেই। এদের তাড়ানোর কথা বললে রাজ্যের প্রশাসনিক ক্ষমতার শীর্ষস্থানীয়রাই যেখানে কোমরে দড়ি বেঁধে জেল খাটানোর হুমকি দেন, সেখানে কার ঘাড়ে ক’টা মাথা যে এদের গায়ে হাত দেয়?
ল্যান্ড জেহাদ : ছলে-বলে-কৌশলে হিন্দুর জমি দখল করা হচ্ছে সর্বত্র। সম্পূর্ণ হিন্দু এলাকায় বেশী টাকা দিয়ে হিন্দুর জমি কেনা হচ্ছে। তৈরী হচ্ছে মসজিদ। এলাকায় একজনও মুসলমান না থাকলেও নিয়ম করে বাইরে থেকে মুসলমানেরা আসছে সেখানে নামাজ পড়তে। এর পরেই এলাকার হিন্দুদের উপর অর্পিত হচ্ছে বিভিন্ন বিধিনিষেধ – নামাজের সময় মন্দিরের মাইক বন্ধ রাখতে হবে, মসজিদ সংলগ্ন রাস্তা দিয়ে পূজার শোভাযাত্রা করা যাবে না, ইত্যাদি ইত্যাদি। অর্থাৎ হিন্দুর ধর্মাচরণের অধিকার খর্ব করা হচ্ছে। বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতি, হিন্দুনারী ধর্ষণ ও অপহরণ, তোলাবাজি, এমনকি খুন-জখম করে সন্ত্রস্ত হিন্দুদের বাধ্য করা হচ্ছে ভিটেমাটি ছেড়ে অন্যত্র পালিয়ে যেতে। রেল লাইন, ন্যাশনাল হাইওয়ের ধারে পড়ে থাকা সরকারী জমি দখল করে গড়ে উঠছে অবৈধ বস্তী। মোট কথা বিভিন্ন উপায়ে সুপরিকল্পিতভাবে হিন্দুর জমি হস্তগত করা হচ্ছে।
লাভ জেহাদ : বেছে বেছে হিন্দু মেয়েদের মিথ্যা প্রেমের ফাঁদে ফেলে তাদের হিন্দু সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করার কাজ চলছে পরিকল্পনা মাফিক। অনেক ক্ষেত্রে বিয়ে হওয়ার আগে হিন্দু মেয়েরা জানতেও পারছে না যে তার জীবনসাথী হিসাবে সে যাকে বেছে নিচ্ছে, সেই ব্যক্তিটি হিন্দু নয়। সুপরিকল্পিত ভাবে সমাজের প্রতিষ্ঠিত, সম্পন্ন হিন্দু পরিবারের মেয়েদের টার্গেট করা হচ্ছে। বিয়ের পর সেই ধর্মান্তরিত মেয়ের সন্তান জন্মানোর সাথে সাথে তার হিন্দু পিতার সম্পত্তি দাবী করা হচ্ছে দেশের আইনকে হাতিয়ার করে। এই লাভ জেহাদের ফলে একদিকে যেমন হিন্দুর সংখ্যা কমছে, অপরদিকে সেই হিন্দু মেয়ের গর্ভ থেকে একাধিক অহিন্দু জন্ম নিচ্ছে। সর্বোপরি আইনের বলে হিন্দু সম্পত্তি চলে যাচ্ছে অহিন্দুর দখলে।
এই ষড়যন্ত্রের জাল ছিড়তে হবে। ভারতের রাষ্ট্রীয় সমাজ, হিন্দু সমাজকেই এই গুরু দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিতে হবে। এই কাজ শুধুমাত্র সমর্থন করে হাত পা গুটিয়ে ঘরে বসে থাকলে হবে না। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নিজ নিজ সামর্থ্য অনুসারে এই কাজে অংশগ্রহণ করতে হবে। দেশরক্ষার এই মহান কর্মযজ্ঞে আজও যারা যোগদান করবেন না, তাদের চিহ্নিত করতে হবে। এই লড়াই নির্ণায়ক লড়াই। এই লড়াই জিততে হলে শত্রুর সাথে সাথে নিজ সমাজের বিশ্বাসঘাতকদেরও চিনতে হবে এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। শপথ নিতে হবে – দেশের এক ইঞ্চি জমিও আমরা আর ছাড়ব না। মা-বোনের সম্মান নষ্ট হতে দেব না।
ভারত জগাখিচুড়ি মার্কা রাষ্ট্র নয়, বিশুদ্ধ হিন্দুরাষ্ট্র
ভারতবর্ষ হিন্দুরাষ্ট্র। এদেশে ইংরেজ শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরেও এবিষয়ে কারও মনে কোন সন্দেহ ছিল না। স্বামী বিবেকানন্দ বিশ্ববাসীর সামনে ভারতের পরিচয় তুলে ধরতে ‘ভারতীয়’ এবং ‘হিন্দু’ এই দু’টি শব্দকে সমার্থক শব্দ হিসাবেই বারবার তুলে ধরেছেন। ঋষি অরবিন্দ, বঙ্কিমচন্দ্র, রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র প্রমুখ মনীষীরাও ভারতীয় জাতীয়তা বলতে হিন্দু জাতীয়তার কথাই বলেছেন। এবিষয়ে তাদের বক্তব্যগুলি পড়লে স্পষ্ট বোঝা যায় যে এই ধারণাটাই তৎকালীন প্রচলিত ধারণা। হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের ভিত্তিতে গঠিত জগাখিচুড়ি মার্কা মিশ্র জাতীয়তার কোন ধারণা সে সময় গড়ে ওঠেনি।
পরবর্তীকালে স্বাধীনতার লড়াই থেকে দূরে সরে থাকা মুসলিম সমাজকে কাছে টানার জন্য একতরফা হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের গান গাইতে শুরু করলেন তৎকালীন দেশনেতারা। তাঁরা এই লক্ষ্যে এতদূর এগিয়ে গেলেন যে ‘ভারতবর্ষ’ এবং ‘ভারতীয়’ এই দুটি মূলগত অবধারণার বিষয়েই তাঁরা আপোষ করতে শুরু করলেন। স্বাধীনতার লড়াইয়ে তাঁদের আন্তরিকতার অভাব ছিল তা আমি বলবনা। কিন্তু ইংরেজদের তাড়িয়ে তাঁরা যে বস্তুটি হাতে পেতে চাইছিলেন, সেই মহামূল্যবান বস্তুটিকেই তাঁরা বিকৃত করে ফেললেন। ভারতবর্ষের প্রাচীনকাল থেকে চলে আসা রাষ্ট্ররূপ অস্তিত্বকেই অস্বীকার করে বলা হল ‘India, a nation in making’- অর্থাৎ ইন্ডিয়া নামের একটি নতুন রাষ্ট্র গঠিত হওয়ার পথে। আরও হাস্যকরভাবে গান্ধীজীকে জাতির জনক বলা হল। মুসলমানদের খুশি করে পাশে পাওয়ার আশায় আমাদের দেশবরেণ্য নেতারা আসমুদ্রহিমাচল বিস্তৃত আমাদের পূর্বপুরুষ, আমাদের প্রাচীন পরম্পরা, আমাদের ইতিহাস, আমাদের মহাপুরুষদের সঙ্গে আমাদের যে গভীর সম্পর্ক, তা ছিন্ন করে দিলেন। এক সভ্য, সুসংস্কৃত, বিশ্ববরেণ্য প্রাচীন রাষ্ট্রের অংশ হিসেবে আমাদের স্বাভিমানবোধ নষ্ট করে দিলেন।
সেই সময় থেকে আজ পর্যন্ত লাগাতার এই প্রচারের পরিণাম হল এই যে আমরা মুসলমানদের কাছে টানতে তো পারলামই না, বরং মুসলমানরা আমাদের দেশের একটা অংশ ভেঙ্গে নিয়ে আলাদা পাকিস্তান গঠন করলো, যা শুরু থেকেই ভারতের শত্রুরাষ্ট্রে পরিনত হল। অথচ আজও আমরা হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের মালা জপ করে চলেছি। আজও আমরা সেই মিশ্র জাতীয়তার মোহমন্ত্রে আচ্ছন্ন। আজও হিন্দুরাষ্ট্রের কথা বললে হিন্দুরাই রে রে করে ওঠেন। আজও আমরা সত্য দর্শন করতে পারছি না। এই সত্য দর্শন করেছিলেন ডঃ বাবাসাহেব আম্বেদকর, করেছিলেন ডঃ হেডগেওয়ার। তাঁরা বিশ্বাস করতেন ভারতে হিন্দু এবং মুসলমান দুটি ভিন্ন জাতি। এই দুটি জাতির ইতিহাসবোধ, জয়-পরাজয়ের অনুভূতি, শত্রু-মিত্র ভাবনা, নায়ক-খলনায়ক ভাবনা পরস্পর বিরোধী। এদের শ্রদ্ধার কেন্দ্র আলাদা, সংস্কৃতিক মূল্যবোধ আলাদা, সর্বোপরি ভারতের মাটির প্রতি এদের দৃষ্টিভঙ্গি সম্পূর্ণ ভিন্ন। অর্থাৎ হিন্দু এবং মুসলিম – দুটি আলাদা জাতি। ভারতবর্ষ হিন্দুর দেশ, হিন্দুরাই ভারতের জাতীয় সমাজ। বাকিরা প্রচলিত আইনের বলে এদেশে নাগরিক হিসাবে বসবাস করলেও তারা কোনদিন এদেশের জাতীয় সত্ত্বারূপে গণ্য হতে পারে না। ভারতে জন্মগ্রহণ করলেও যদি আপনি আপনার পূর্বপুরুষদের অস্বীকার করেন, ভারতের শত্রুকে মিত্ররূপে গ্রহণ করেন, ভারতের পরাজয়ে আনন্দিত হন, বিদেশী আক্রমণকারী ঘোরী-বাবর আপনার চোখে নায়ক হয়ে যায়; পক্ষান্তরে দেশের ধর্ম ও সংস্কৃতিরক্ষায় ব্রতী শিবাজী মহারাজ এবং মহারাণা প্রতাপ হয়ে যায় খলনায়ক, তাহলেও কি আপনাকে ভারতের জাতীয় সমাজের অংশ হিসাবে গন্য করা উচিত? না কি আপনাকে দেশদ্রোহী বলে চিহ্নিত করা উচিত?
প্রাচীন কাল থেকেই ভারতে বহু রাজ্য ও বহু রাজা থাকলেও ভারত রাষ্ট্র হিসাবে এক ছিল। আসমুদ্র হিমাচলের রাষ্ট্রীয়তা এক ছিল। এই রাষ্ট্রীয়তার ভিত্তি ছিল সনাতন ধর্ম। এই রাষ্ট্রীয়তার বন্ধন ছিল সাংস্কৃতিক বন্ধন। আমাদের দুর্ভাগ্য যে এই সত্যকে স্বীকার করার মত একজন সাহসী ও নিঃস্বার্থ রাষ্ট্রপুরুষকে এখনও দেশনেতা হিসেবে আমরা খুঁজে পাই নি, যিনি বুক চিতিয়ে ঘোষণা করবেন – এই দেশ হিন্দুর দেশ, ভারতবর্ষ হিন্দুরাষ্ট্র। তাই রাষ্ট্র সম্বন্ধে দেশবাসীর বিভ্রান্তি দূর করতে হবে। যে জাতি কে শত্রু আর কে মিত্র তা চিনতে পারে না, সেই জাতির ধ্বংস অনিবার্য। তাই জাতিকে শত্রু মিত্র চেনাতে হবে। আর এই হিন্দু রাষ্ট্রীয়তার পরিচয় দেশবাসীকে করাতে হবে।
চাই প্রতিক্রিয়াশীল হিন্দুত্ব
হিন্দু সমাজের সংবেদনশীলতা আজ তলানিতে ঠেকেছে। প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ – দুই ভাবেই যথেচ্ছ আক্রমণ চলছে হিন্দুর উপর, অথচ হিন্দু নির্বিকার, কোন প্রতিক্রিয়া চোখে পড়ছে না, বিশেষতঃ আমাদের এই বাংলায়। একদিকে চলছে বাম বুদ্ধিজীবিদের তাত্ত্বিক আক্রমণ। অপরদিকে চলছে হিন্দুর উপর প্রত্যক্ষ আক্রমণ। আমরা চোখে দেখেও দেখছি না। কানে শুনেও শুনছি না। ধর্মনিরপেক্ষতার পর্দা আমাদের চোখ ও কান – দুটোকেই বন্ধ করে দিয়েছে। তথাকথিত বুদ্ধিজীবিদের কলম এবং মুখের দাপটে আমাদের সর্বজনীন, উদার হিন্দু মূল্যবোধ গুলি আজ আমাদের প্রগতিশীল বাঙালির কাছে সংকীর্ণতা এবং ধর্মান্ধতা হিসাবে পরিগণিত হচ্ছে। হিন্দু পরিচয় আজ আমাদের কাছে গৌরবের বিষয় নয়। এই স্রোতে গা ভাসানোর প্রবণতা ভাইরাসের মত ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র। সাধু – সন্ন্যাসীরাও ব্যতিক্রম নন। সারা বিশ্বে হিন্দুত্বের পতাকা উড্ডীন করেছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ। চিকাগো ভাষণের ছত্রে ছত্রে হিন্দুত্বের বিশ্বজনীনতার কথা তুলে ধরেছিলেন তিনি এবং স্পষ্ট ভাষায় বলেছিলেন যে, এই হিন্দুধর্মের প্রতিনিধি হিসেবে তিনি গর্ব অনুভব করেন। অথচ তাঁর ধ্বজাধারী রামকৃষ্ণ মিশনের কর্ণধাররা আজ নিজেদের হিন্দু পরিচয় অস্বীকার করতে তৎপর, এমনকি খোদ স্বামীজিকেই তারা এই তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষতার মোড়কে মুড়ে আমাদের সামনে তুলে ধরতে বদ্ধপরিকর।
হিন্দু মানেই সে প্রকৃত ধর্মনিরপেক্ষ – এই সহজ সরল সত্যটা কেউ অস্বীকার করতে পারে কি? অন্য ধর্মীদের হাতে এত অন্যায়, এত অত্যাচার সহ্য করার পরেও ভারতবর্ষ যে আজও ধর্মনিরপেক্ষ, সংখ্যালঘুরা সারা পৃথিবীর তুলনায় এদেশে বেশি সুরক্ষিত – তার কারণ এদেশের সংবিধান বা সরকার তাদের সুরক্ষা দিচ্ছে বলে নয়। তার একমাত্র কারণ এই যে ভারতবর্ষ এখনও হিন্দুপ্রধান। এদেশে প্রকৃত ধর্মনিরপেক্ষতার গ্যারান্টি কোনও রাজনৈতিক দল, সরকার বা প্রশাসন নয় – দিতে পারে একমাত্র সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সমাজ। তা না হলে আজ হিন্দুবিহীন কাশ্মীর ধর্মনিরপেক্ষ নয় কেন? কেন ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পরে পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ ধর্মনিরপেক্ষ নয়? শুধু কাশ্মীর কেন, যেখানে যেখানে হিন্দু সংখ্যালঘু হয়ে গেছে, সেই সেই অংশে ধর্মনিরপেক্ষতা হয়েছে পদদলিত। তার সাথে সাথে সেখানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে জেহাদী সন্ত্রাসবাদ, বিচ্ছিন্নতাবাদ। এই কঠোর সত্য স্বীকার করার সময় কি এখনও আসেনি? অথচ এই হিন্দুকেই ধর্মনিরপেক্ষতার পাঠ পড়ানো হচ্ছে। এই মেকি ধর্মনিরপেক্ষতার মাদকে আচ্ছন্ন করে হিন্দু সমাজকে হীনবল করে দেওয়া হচ্ছে। প্রতিটি ক্ষেত্রে হিন্দুকে তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দায়িত্বের বোঝা একা তার কাঁধে চাপিয়ে দিয়ে । হিন্দুর স্বার্থ রক্ষার জন্য আওয়াজ উঠলেই সাম্প্রদায়িকতার তকমা এঁটে তাকে দমন করা হচ্ছে কঠোর ভাবে।
পাশাপাশি হিন্দুর উপর চলছে প্রত্যক্ষ আক্রমণ। নিঃশব্দে চলছে জনসংখ্যা বৃদ্ধি। ফুরফুরা শরীফের পীরজাদা ত্বহা সিদ্দিকির মতে আজ পশ্চিমবঙ্গে মুসলমান জনসংখ্যা এরাজ্যের মোট জনসংখ্যার ৪১% এরও বেশি। পশ্চিমবঙ্গে হিন্দুর সংখ্যালঘু হতে আর কত সময় লাগবে? সেদিন আর দূরে নয় যেদিন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদে কোন বন্দ্যোপাধ্যায়-চট্টোপাধ্যায় থাকবে না, থাকবে শুধু মোল্লা বা ইসলাম পদবিধারী ব্যক্তিরা। সেদিন এই ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা শান্তি ও সুরক্ষার সাথে এখানে বসবাস করতে পারবেন তো? একদিন বাংলাদেশ থেকে পাততাড়ি গুটিয়ে যেভাবে পালিয়ে আসতে হয়েছিল, ঠিক সেভাবে এই বাংলা ছেড়ে পালাতে হবে না তো? দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া, নদীয়া, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ, মালদা, উত্তর দিনাজপুর সহ বাংলার যে যে জেলায় হিন্দুর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য ভাবে কমে গেছে, সেখানে রাজনৈতিক সংঘর্ষ, ডাকাতি ইত্যাদি বিভিন্ন অছিলায় হিন্দুর উপর চলছে অবর্ণনীয় অত্যাচার। জমি দখল, ঘরবাড়ি লুঠ, পুড়িয়ে দেওয়া, ফসল ও মাছের ভেড়ি লুঠ থেকে শুরু করে হিন্দু নারীধর্ষণ, হত্যা ও অপহরণ – সব কিছুই চলছে অবাধে। এসবের আসল উদ্দেশ্য গ্রামের পর গ্রাম হিন্দুবিহীন করে দেওয়া। এখনই সচেতন না হলে কি আবার দেশভাগ, আবার উদ্বাস্তু হওয়া, আবার নারকীয় হত্যালীলা, মা বোনের সম্ভ্রমহানি আটকানো যাবে?
বাংলার জন-চরিত্রের পরিবর্তনের সাথে সাথে বদলাচ্ছে এরাজ্যের চালচিত্র। ক্ষুদিরাম, বাঘ যতীন, বিনয়-বাদল-দীনেশের বিপ্লবী বাংলা এখন জেহাদী সন্ত্রাসবাদের আঁতুর ঘর – রশিদ খান, আফতাব আনসারি, ইয়াসিন ভাটকালদের লীলাক্ষেত্র। এন.আই.এ এবং আই.বি-র বক্তব্য অনুসারে বাংলাদেশ থেকে তাড়া খাওয়া বেশ কিছু সন্ত্রাসবাদী পশ্চিমবঙ্গে আশ্রয় নিয়েছে। এই সন্ত্রাসবাদীদের পিছনে মদত আছে এরাজ্যের সরকারী পার্টির কয়েকজন নেতার। এই সমস্ত নেতারা আবার লোকসভা এবং রাজ্যসভার এম.পি।তবুও বাংলার হিন্দু নির্বিকার।আমাদের এই উদাসীনতার মুল্য দিতে হবে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে। আর সেই মুল্য হবে ভয়ংকর। আমাদের পূর্বপুরুষদের উদাসীনতার মূল্য দিয়েছি আমরা। তবুও ওপার থেকে অপমানজনকভাবে বিতাড়িত হয়ে এসে এই বাংলায় আমাদের ঠাঁই হয়েছিল। কাশ্মীরের হিন্দুর মত এই বাংলা থেকে বিতাড়িত হয়ে আমাদের ছেলে মেয়েরা কোথায় যাবে? তাদের ভবিষ্যৎ কী হবে? তারা কি আমাদের কাছে জবাব চাইবে না? তাই সময় থাকতে সচেতন হতে হবে, সংবেদনশীল হতে হবে। পৃথিবীর যে কোন প্রান্তে কোন একজন হিন্দুর উপর অত্যাচার হলে প্রত্যেকটি হিন্দু যেদিন ক্রোধে পাগল হয়ে উঠবে এবং প্রতিকার না হওয়া পর্যন্ত শান্ত হবে না – সেদিন থেকে হিন্দুর ভাগ্যের চাকা ঘুরতে শুরু করবে। এই রকম সংবেদনশীল এবং প্রতিক্রিয়াশীল হিন্দুত্বই হিন্দু সমাজকে রক্ষা করতে পারবে, আমাদের দেশ এই সুজলা-সুফলা-শস্যশ্যামলা ভারতবর্ষকে রক্ষা করতে সক্ষম হবে। নান্যঃ পন্থা বিদ্যতে অয়নায়।
ভোট দিয়ে কিনলাম
‘এ রাজ্যের জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় চার কোটি মুসলমান৷ তাই এই রাজ্যের মুসলমানেরা যে রাজনৈতিক দলকে ভোট দেবে সেই দল বাংলায় ক্ষমতায় আসবে’ – হলদিয়ায় এক জনসভায় একথা বললেন ফুরফুরা শরীফের পীরজাদা মৌলানা ত্বহা সিদ্দিকী৷ মঞ্চে উপবিষ্ট তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী৷ ধর্ম ও রাজনীতির কী অপূর্ব মেলবন্ধন! ধর্ম ও সম্প্রদায়ের আধারে ভোট দেওয়ার ডাক দিলেন মৌলানা৷ সেকুলার নেতা চুপ, সেকুলার মিডিয়া চুপ, সেকুলার বুদ্ধিজীবি মহল চুপ৷ এই একই আহ্বান যখন কোন হিন্দু ধর্মগুরু বা সাধু-সন্ত বলেছেন, তখনই সবার মুখ একসঙ্গে খুলেছে, হুক্কা-হুয়া রব উঠেছে – ‘ধর্ম নিয়ে রাজনীতি মানছি না’, ‘সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে রাজনীতি চলবে না’, ‘হিন্দু মৌলবাদ নিপাত যাক’ ইত্যাদি ইত্যাদি৷ সমাজ জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতৃত্ব প্রদানকারী ব্যক্তিদের স্বার্থের পুঁতিগন্ধযুক্ত এই মিথ্যাচারের ফলেই একদিন পাঞ্জাব ও বাংলার লাখ লাখ হিন্দুকে ধন – মান – ইজ্জত খুইয়ে সর্বস্বান্ত হতে হয়েছিল৷ প্রাণ দিতে হয়েছিল ধনী – দরিদ্র, ব্রাহ্মণ – নমঃশূদ্র, কংগ্রেস – সি পি এম হিন্দুকে৷ সেই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হচ্ছে৷ সাম্প্রদায়িক ব্লকভোট দিয়ে রাজনৈতিক নেতাদের এবং পেট্রোডলার দিয়ে বুদ্ধিজীবিদের কেনা হচ্ছে৷ বাংলার গ্রামে গ্রামে হিন্দু নিপীড়ন, হিন্দুর জমিদখল, হিন্দু মেয়েদের অপহরণ – চোখের সামনে দেখেও কৃতদাস নেতারা যেন ধৃতরাষ্ট্র৷ মিডিয়ার কাছে এগুলো নিউজ নয়৷ মুসলমানদের এই সাম্প্রদায়িক আগ্রাসী মানসিকতা যে বাংলাকে দ্বিতীয় কাশ্মীরে পরিণত হওয়ার দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে তা যেন সবাই বুঝেও বুঝছে না৷
এই মুসলিম আগ্রাসন থেকে কলকাতা শহর কি মুক্ত? কলকাতা লেদার কমপ্লেক্সের কাছে মন্দিরের পাশেই মসজিদ নির্মাণের চেষ্টা চলছে৷ পূর্ব কলকাতার গোবরা এলাকার আসগর মিস্ত্রী লেন-এ জমি দখল করে মসজিদের পরিকল্পনা হয়েছে৷ গত ৩রা জানুয়ারী সি আই টি রোডে নেপাল সুইটসের পাশে মাইক লাগিয়ে পুলিশের সামনে ঘোষণা করা হয়েছে যে, প্রশাসন অনুমতি না দিলে কলকাতা শহরকে স্তব্ধ করে দেওয়া হবে ‘চাক্কাজ্যাম’ করে৷ যে কেউ নিরপেক্ষ ভাবে চিন্তা করলে সহজেই বুঝতে পারবে যে, হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় মসজিদ নির্মাণ করার এই উদ্যোগ কোন আধ্যাত্মিক প্রয়োজনে নয়, বরং হিন্দুসমাজের সামনে একটা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়া যে, আমরা তো এরকমই করব, তোমাদের ক্ষমতা থাকলে আটকাও৷
হিন্দু সমাজকে এই চ্যালেঞ্জ আজ নিতেই হবে৷ বাংলার হিন্দুকে যদি বাঁচতে হয়, এই মাটিকে বাঁচাতে হয়, তাহলে কোন বিশেষ রাজনৈতিক দলের প্রতি স্থায়ী আনুগত্য দেখানো চলবে না৷ যে দল যখন হিন্দুস্বার্থ রক্ষা করবে, সেই দলকে তখন সক্রিয় সমর্থন করে ক্ষমতায় বসাতে হবে৷ সংখ্যালঘু মুসলমানেরা যদি এই কাজ করতে পারে তাহলে ‘এখনও পর্যন্ত সংখ্যাগুরু’ হিন্দুদের বাংলাকে বাঁচাতে এই কাজ করতেই হবে৷ ‘ভোট দিয়ে কিনলাম’ এর কাহিনী নতুন করে লিখতে হবে৷
আমরা ধর্মের নামে নিরন্তর অধর্ম করে চলেছি
ঈশ্বরভক্তিই যদি ধর্মের মাপকাঠি হয় তবে শিবভক্ত রাবণ সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ধার্মিক। কিন্তু রাবণ ছিলেন অধর্মের প্রতীক৷ ছলনা, কপটতামাত্রই যদি অধর্ম হয় তবে শ্রীকৃষ্ণ-র থেকে বড় অধার্মিক পৃথিবীতে আর জন্মগ্রহণ করে নি। অহিংসাই যদি পুণ্য হয় তবে রামচন্দ্র এবং শ্রীকৃষ্ণ মহাপাতক, মা দুর্গা এবং মা কালী পাপের দেবী। আধুনিক কালের ক্ষুদিরাম বোস, বিনয়-বাদল-দীনেশ, বাঘা যতীন, মাস্টারদা সূর্যসেন সকলেই ঘৃণার পাত্র। এই কথা গুলি সবাই জানেন যে কৃষ্ণস্তু ভগবান স্বয়ং, শ্রীরামচন্দ্র হলেন মর্যাদা পুরুষোত্তম এবং অসূরবংশ ধ্বংস করতেই মা দুর্গা ও মা কালীর আবির্ভাব৷ অর্থাৎ তাঁদের প্রদর্শিত পথই হল ধর্মের পথ৷ কিন্তু এই পথে চলার জন্য যে সাহস দরকার তা আমাদের মধ্যে নেই। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় এই যে, আমাদের এই দুর্বলতা স্বীকার করে নেওয়ার পরিবর্তে আমরা ধর্মের পরিভাষাকেই বদলে ফেলেছি৷ নিজেদের মত করে ধর্মের ব্যাখ্যা করে সমাজকে বিভ্রান্ত করে চলেছি৷ দুর্যোধনকে আমি শ্রদ্ধা করি এই কারণে যে তিনি মুক্ত কন্ঠে স্বীকার করেছিলেন - "জানামি ধর্মম্ ন চ মে প্রবৃত্তি, জানামি অধর্মম্ ন চ মে নিবৃত্তি"। অর্থাৎ ধর্ম কি, তা আমি জানি। কিন্তু আমার তাতে প্রবৃত্তি নেই। আর অধর্ম কি, তাও আমি জানি কিন্তু তা থেকে নিজেকে নিবৃত্ত করার ক্ষমতা আমার নেই। কিন্তু আমরা ধর্মের নামে নিরন্তর অধর্ম করে চলেছি। অধর্মকে প্রশ্রয় দিয়ে চলেছি। অপেক্ষা করে চলেছি ভগবানের কোন এক অবতারের আবির্ভাবের জন্য, যিনি এসে অধর্মের বিনাশ করবেন। আসলে ভগবান এখন আবির্ভূত হলে আমাদের মত অধার্মিকদের বিনাশ প্রথমে করবেন। যেমন করেছিলেন দেবাদিদেব মহাদেব। দক্ষরাজের অন্যায় মুখ বুজে সহ্য করছিল সকলে। নীরব দর্শক, আমাদের মত। ভগবান শিব দক্ষরাজকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হন নি। সতীর মৃতদেহ সাথে নিয়ে প্রলয় শুরু করলেন এই অন্যায় কে প্রশ্রয়্দানকারী সমগ্র সৃষ্টিকে ধ্বংস করার জন্য। তাই কবি বলেছিলেন, "অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে, তব ঘৃণা যেন তারে তৃণসম দহে"। আজকে দেগঙ্গা, নলিয়াখালী, উস্তি, নৈহাটিতে হিন্দুদের উপর অত্যাচার দেখেও আমরা নীরব। সামান্য মৌখিক প্রতিবাদ করা থেকেও আমরা বিরত। আমাদের ভগবান ক্ষমা করবেন না। শতবার ঘন্টা বাজিয়ে হাজার হাজার নামজপ করলেও নয়।
অন্যায়ের বিরুদ্ধে নির্ণায়ক যুদ্ধই হল ধর্ম৷
একটা বিশাল প্রাণীকে কাবু করে ফেলার পরেও অজগর কিন্তু একবারে সেটাকে গিলে খেতে পারে না৷ ক্ষমতা এবং ক্ষুধা অনুযায়ী একটু একটু করে গিলতে থাকে ৷ খাওয়া কতদিনে শেষ হবে তা নির্ভর করে শিকারের সাইজের উপরে এবং শিকারীর হজম ক্ষমতার উপরে৷ শিকারের ছটফটানি দেখে কেউ বলে যে এখনও ধড়ে প্রাণ আছে, এখনও লড়াই করছে, অাত্মসমর্পণ করে নি; সুতরাং যুদ্ধ শেষ হয় নি৷ তাহলে সে টেকনিক্যালি একশো শতাংশ সত্যি কথা বললেও সেই কথা কারো মনে এই আশা জাগাবে না যে, শেষ পর্যন্ত সেই শিকার অজগরের হাত থেকে নিষ্কৃতি পাবে৷
মুসলিম অাগ্রাসনের শিকার আমাদের হিন্দু সমাজের অবস্থা অাজ সেই অজগরের গ্রাসে আবদ্ধ অসহায় প্রাণীর মত৷ ৷ সুদীর্ঘ লড়াইয়ের পর অাজকে যদি আমরা হিসাবে বসি, তাহলে দেখবো আমাদের মাটি গেছে, দেশ ছোট হয়েছে৷ আমাদের মানুষ ধর্মান্তরিত হয়ে সমাজ ছেড়ে চলে গেছে, সমাজ ছোট হয়েছে৷ রাজনৈতিক স্বাধীনতা পেলেও হিন্দুর ধর্মীয় স্বাধীনতা লুন্ঠিত হচ্ছে প্রতি মুহূর্তে৷ আজও বাংলার গ্রামেগঞ্জে জমি দখল চলছে অবাধে৷ হিন্দু মেয়েদের ছলে-বলে-কৌশলে হিন্দু সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে লাভজেহাদের মাধ্যমে৷ হিন্দু সংখ্যালঘু এলাকাগুলিতে হিন্দুর ধর্মাচরণ সংখ্যাগুরুদের অনুমতিসাপেক্ষ৷ ভারতের ইসলামীকরণ চলছে নিজের গতিতে৷ আফগানিস্তান গেছে, পাকিস্তান গেছে, গেছে সোনার বাংলা৷ ভূস্বর্গ কাশ্মীর থেকেও নেই৷ পশ্চিমবঙ্গ, আসাম যাওয়ার পথে৷ সম্পূর্ণ ভারতের ইসলামীকরণ শুধু সময়ের অপেক্ষা৷
অাজকে ভারতে যে মুসলমানদের দেখতে পাচ্ছি, তাদের সিংহভাগই তো হিন্দু থেকে ধর্মান্তরিত৷ সুদীর্ঘ মুসলিম শাসনে যারা ভয়ে অথবা স্বার্থের লোভে হিন্দুধর্ম ত্যাগ করে মুসলমান হয়ে গিয়েছিল, তাদেরই বংশধর৷ আর ভারতের হিন্দুদের বর্তমান প্রজন্ম হল সেই সব বীর এবং ধর্মনিষ্ঠ ব্যক্তিদের উত্তরসূরী, যাঁরা সেই সময় শাসক মুসলিম শক্তির বিরুদ্ধে প্রাণপণ লড়াই করেছেন কিন্তু ধর্মত্যাগ করেন নি৷ কিন্তু আজকে আমরাই মুসলিম আগ্রাসনের সামনে পর্যুদস্ত হয়ে পড়ছি৷ তাদের অন্যায়, অত্যাচারের প্রতিবাদ করতে সাহস করছি না৷ বরং কোন সাহসী হিন্দু রুখে দাঁড়ালে, তাকে সর্বতোভাবে সহযোগিতা করার পরিবর্তে তাকেই উল্টে দোষারোপ করছি৷ মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় হিন্দুরা নরকযন্ত্রণা ভোগ করেও অত্যাচারী মুসলমানদের সাথে আপোষ করে থাকাটাকেই নিরাপদ বলে মনে করে৷ হিন্দু প্রতিরোধের কথা, হিন্দুর এবং তাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বার্থরক্ষার কথা বলতে গেলে বলে,"আপনারা এখানে আসা যাওয়া না করলেই আমরা ভালো থাকবো"৷ আর যেখানে মুসলিম সমস্যা এখনও প্রকট হয়ে ওঠে নি, সেখানকার হিন্দুরা উদাসীন৷
এই ক্লীবতা, কাপুরুষতা, জড়তা, সংবেদনহীনতাকে সম্বল করে শুধু প্রাচীন গৌরবগাথা গেয়ে কোন জাতি টিকে থাকতে পারে না৷ হিন্দুকে যদি অস্তিত্ব রক্ষা করতে হয়, তবে এই জড়তাকে ঝেড়ে ফেলে মাথা উচু করে দাঁড়াতে হবে৷ চাই একটা মরিয়া প্রয়াস৷ যেখানেই একজন হিন্দুর উপরে অত্যাচার হবে, প্রতিবাদে রাস্তায় নামতে হবে৷ প্রতিকার করতে হবে তৎক্ষণাৎ৷ সাপ ফণা তোলার সাথে সাথে থেঁতলে দিতে হবে সেই ফণা ৷ তবেই হিন্দু বাঁচবে, দেশ বাঁচবে৷ মনে রাখতে হবে অন্যায়ের সাথে আপোষ করে শান্তিলাভ করা যায় না৷ শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয় অন্যায়ের বিনাশ হলে৷ গীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আঠারো অধ্যায় ধরে অর্জুনকে এই শিক্ষাই দিয়ে গেছেন৷ অধর্মের বিরুদ্ধে আপোষহীন লড়াইয়ের বার্তাই হল গীতাসার৷ অন্যায়ের বিরুদ্ধে নির্ণায়ক যুদ্ধই হল ধর্ম৷ বাঁচার অন্য কোন পথ নাই৷ তাই অাজ আবার ফিরে আসুক: -
"সে এক দিন, লক্ষ পরাণে শঙ্কা না মানে, না রাখে কাহার ঋণ
জীবন মৃত্যু পায়ের ভৃত্য, চিত্ত ভাবনাহীন৷৷"
Subscribe to:
Posts (Atom)