পশ্চিমবঙ্গে বসবাসকারী বাঙালি হিন্দুরা, যারা ভারতের মাটিকে মাতৃসম মনে করেন, তারাই পশ্চিমবঙ্গের ভূমিপুত্র।
পশ্চিমবঙ্গের বাইরে, ভারতের অন্য রাজ্য কিংবা পৃথিবীর যে কোনও প্রান্তে বসবাসরত একজন বাঙালি হিন্দু এরাজ্যে ফিরে এসে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে চাইলে তিনি সর্বদা স্বাগত এবং ভূমিপুত্রের মর্যাদা পাওয়ার অধিকারী।
২০শে জুন ১৯৪৭-এ বঙ্গীয় আইন পরিষদের ভোটাভুটিতে একজন মুসলমানও পশ্চিমবঙ্গের পক্ষে ভোট দেয় নি। সবাই চেয়েছিল সম্পূর্ণ বাংলা পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাক।
এমনকি ১৯৪৬ এর সাধারণ নির্বাচন, যাতে মুসলিম লীগের মূল ইস্যু ছিল পাকিস্তান, সেই নির্বাচনে বাংলার মুসলমানেরা উজাড় করে লীগকে ভোট দিয়েছিল। অর্থাৎ প্রায় সব মুসলমান চেয়েছিল যে সম্পূর্ণ বাংলা পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হোক। তাদের সমর্থনের ফলেই এই নির্বাচনে মুসলমানদের জন্য সংরক্ষিত সিটের ৯৫% লীগের পক্ষে যায়।
ধর্মের ভিত্তিতে বিভক্ত বঙ্গের এক তৃতীয়াংশ ভুমি এই পশ্চিমবঙ্গ যে হিন্দুদের হোমল্যান্ড এবং বাঙালি হিন্দুরা যে এখানকার ভূমিপুত্র সে বিষয়ে এরপরেও কোনও সন্দেহ আছে?
ভারত উপমহাদেশে যে সংস্কৃতির জন্ম এবং ক্রমবিকাশ হয়েছে, তার অন্যতম মূল তত্ত্ব হল Live and let live. বহিরাগত আব্রাহামিক ভাবধারার মূলতত্ত্ব এই মাটিতে বিকশিত Live and let live সংস্কৃতির পরিপন্থী। তাই এই অসহিষ্ণু আব্রাহামিক ভাবধারায় যারা বিশ্বাস করে, তারা কিভাবে এই মাটির ভূমিপুত্র হতে পারে?
কেউ ভারতের নাগরিক হলেই কিন্তু সে এরাজ্যের ভূমিপুত্র হতে পারে না। ভূমিপুত্র একটা বিশেষ 'স্টেটাস'। সবাই ভারতের নাগরিক হলেও, ভারতের একতা ও অখণ্ডতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হলেও বিহারে একজন বিহারীর যে স্টেটাস, মহারাষ্ট্রে মারাঠির যে স্টেটাস, তামিলনাড়ুতে একজন তামিলের যে স্টেটাস, গুজরাটে একজন গুজরাটির যে স্টেটাস, আসামে একজন অহমীয়ার যে স্টেটাস, নাগাল্যান্ডে একজন নাগার যে স্টেটাস, পশ্চিমবঙ্গে একজন হিন্দু বাঙালির সেই একই স্টেটাস প্রাপ্য। এই অধিকার থেকে কেউ আমাদের বঞ্চিত করতে পারবে না।
পাশাপাশি, পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত তফশিলি উপজাতির অন্তর্ভুক্ত বন্ধুরাও এখানকার ভূমিপুত্র বলে আমি মনে করি।
এছাড়াও যে সমস্ত অবাঙালি হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈনদের জন্ম পশ্চিমবঙ্গে অথবা দীর্ঘ সময় ধরে এখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন, তাদের মধ্যে যারা নিজেদের আইডেন্টিটি বজায় রেখেও এখানকার ভূমিপুত্র হিন্দু বাঙালি সমাজ, আদিবাসী সমাজ এবং তাদের ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল; তারা চাইলে তাদের সাথে এই ভূমিপুত্রের স্টেটাস ভাগাভাগি করে নিতে আমাদের কোনও আপত্তি থাকা উচিত নয় বলে আমি মনে করি।
মনে রাখতে হবে, ভারতের দশটা রাজ্যকে এবং রাজ্যের ভূমিপুত্রদের ৩৭১ ধারার মাধ্যমে বিশেষ স্টেটাস দেওয়া হয়েছে। আন্দামান এবং নিকোবর দীপপুঞ্জের ভূমিপুত্রদের 'আইল্যান্ডার কার্ড' এর মাধ্যমে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। তাই এই ভূমিপুত্রের লীগ্যাল স্টেটাসের কল্পনা মোটেই অলীক নয়। এর বাস্তবায়ন সম্ভব কিন্তু তার জন্য অনেক মূল্য দিতে হবে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আমাদের এই বাঙালি হিন্দু জাতীয়চেতনা কি বৃহত্তর হিন্দু অবধারণার পরিপন্থী?
আপনি আর আমি যখন এক জায়গায় আসি তখন কি নিজের ব্যক্তিত্বকে বিসর্জন দিয়ে এক জায়গায় আসতে হয়? কয়েকজন ব্যক্তি নিয়ে যখন একটা পরিবার তৈরি হয়, তখন সেই পরিবারের সব ব্যক্তিকে তাদের ব্যক্তিসত্ত্বাকে বিসর্জন দিতে হয়? বরং যে ব্যক্তি বেশী প্রতিষ্ঠা অর্জন করে, পরিবারে তার গুরুত্ব বেশী থাকে, সে একজন দায়িত্বশীল সদস্য হিসেবে আলাদা সম্মান পায়। তাহলে বৃহত্তর হিন্দু সমাজের অঙ্গ হতে হলে, সেখানে ভ্যালু অ্যাড করতে হলে বাঙালিকে তার জাতীয় পরিচয় বিলোপ করতে হবে কেন? কেন আমরা বৃহত্তর হিন্দু সমাজের গুরুত্বপূর্ণ এবং দায়িত্বশীল সদস্য হিসেবে বাঙালি সমাজকে তৈরি করবো না? বাঙালির মাটি গেছে, মানুষ গেছে, আত্মসম্মান তলানিতে। সরকার এনআরসি আর ক্যাব করে দিলেই আমরা সন্তুষ্ট! এটাও যে আমাদের ডিমান্ডের জন্য হচ্ছে তাও তো নয়! অহমীয়া আন্দোলনের চাপে এই এনআরসি। লক্ষ লক্ষ উদ্বাস্তু বাঙালি হিন্দু ফোর্জ ডকুমেন্ট তৈরি করিয়ে লুকিয়ে ভারতে থাকা পছন্দ করেছে, কিন্তু নিজদের নাগরিকত্বের দাবিতে মরণপণ আন্দোলন করেনি। এই অচেতন, পরনির্ভরশীল জাতিকে আত্মনির্ভর এবং স্বাভিমান সম্পন্ন হতে হলে নিজের জাতীয়চেতনাকে জাগাতেই হবে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আমাদের এই বাঙালি হিন্দু জাতীয়চেতনা কি বৃহত্তর হিন্দু অবধারণার পরিপন্থী?
আপনি আর আমি যখন এক জায়গায় আসি তখন কি নিজের ব্যক্তিত্বকে বিসর্জন দিয়ে এক জায়গায় আসতে হয়? কয়েকজন ব্যক্তি নিয়ে যখন একটা পরিবার তৈরি হয়, তখন সেই পরিবারের সব ব্যক্তিকে তাদের ব্যক্তিসত্ত্বাকে বিসর্জন দিতে হয়? বরং যে ব্যক্তি বেশী প্রতিষ্ঠা অর্জন করে, পরিবারে তার গুরুত্ব বেশী থাকে, সে একজন দায়িত্বশীল সদস্য হিসেবে আলাদা সম্মান পায়। তাহলে বৃহত্তর হিন্দু সমাজের অঙ্গ হতে হলে, সেখানে ভ্যালু অ্যাড করতে হলে বাঙালিকে তার জাতীয় পরিচয় বিলোপ করতে হবে কেন? কেন আমরা বৃহত্তর হিন্দু সমাজের গুরুত্বপূর্ণ এবং দায়িত্বশীল সদস্য হিসেবে বাঙালি সমাজকে তৈরি করবো না? বাঙালির মাটি গেছে, মানুষ গেছে, আত্মসম্মান তলানিতে। সরকার এনআরসি আর ক্যাব করে দিলেই আমরা সন্তুষ্ট! এটাও যে আমাদের ডিমান্ডের জন্য হচ্ছে তাও তো নয়! অহমীয়া আন্দোলনের চাপে এই এনআরসি। লক্ষ লক্ষ উদ্বাস্তু বাঙালি হিন্দু ফোর্জ ডকুমেন্ট তৈরি করিয়ে লুকিয়ে ভারতে থাকা পছন্দ করেছে, কিন্তু নিজদের নাগরিকত্বের দাবিতে মরণপণ আন্দোলন করেনি। এই অচেতন, পরনির্ভরশীল জাতিকে আত্মনির্ভর এবং স্বাভিমান সম্পন্ন হতে হলে নিজের জাতীয়চেতনাকে জাগাতেই হবে।
।।এ মাটি আমার মাটি, মাটির দখল ছাড়ছি না।।
No comments:
Post a Comment