Friday, April 10, 2015

ইউনিটি

ইউনিটির থেকে বড় কথা হল লাইন অফ থিংকিং আর লাইন অফ অ্যাকশান৷ ইউনিটি রাখতে গিয়ে একটা জগদ্দল পাথরের সাথে নিজেদের যুক্ত করে রাখলে আমরাই স্থবির হয়ে পড়বো কি না সেটাও মাথায় রাখতে হবে৷ ভাই সংগঠন করে বড় হয়ে তারপরে লড়াই করবো, এই মানসিকতায় আমি বিশ্বাস করি না৷ মুর্শিদাবাদ, বীরভূম, নদীয়া, দুই ২৪ পরগণার হিন্দুরা যদি ২০ বছর আগেই লড়াই শুরু করতো তাহলে চিত্রটা অন্যরকম হতো৷ কিন্তু সেদিন কেউ তাদেরকে লড়াই করতে বলে নি, বলেছে সংগঠন করে শক্তিশালী হতে৷ কিন্তু সেই পথে হাটার পরিণাম স্বরূপ আজকের হিন্দু সেদিনের তুলনায় অনেক বেশী দুর্বল, আর মুসলমানেরা ধনে-জনে অনেক বেশী সমৃদ্ধশালী ও শক্তিশালী৷ আরও ১০ বছর ধরে সংগঠন করে শক্তি অর্জন করে এই আগ্রাসনকে প্রতিরোধ করার কথা চিন্তা করলে বাংলার যে পরিস্থিতি দাঁড়াবে, আমি সেই চিত্র দেখতে চাই না৷ তাই আজকে বাংলার হিন্দুর কানে একটাই মন্ত্র দিতে চাই - সংঘর্ষ৷ সবাই নিজের নিজের ক্ষেত্রে কাজ করুক, কোন আপত্তি নেই৷ তাদের গঠনমূলক কাজের প্রতি আমার শ্রদ্ধা আছে এবং সেই কাজের প্রয়োজনীয়তাও আছে বলে আমি স্বীকার করি৷ কিন্তু উপস্থিত চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করার পন্থারূপে আজকে শুধুমাত্র সংগঠন করে, সংঘর্ষকে এড়িয়ে গিয়ে, ভবিষ্যতে লড়াই করার মিথ্যাস্বপ্ন দেখিয়ে দল বাড়ানোর মানসিকতাকে আমি কখনোই মেনে নিতে পারবো না৷ আর সত্যি সত্যিই যদি ১০ বছর পরে লড়াই হয়ও, সে লড়াইয়ের পরিণাম হবে নিশ্চিত পরাজয়৷

মডারেট মুসলিম

আজকাল অনেক মুক্তমনা হিন্দু আমাদেরকে 'মডারেট মুসলিম'- এর কল্পকাহিনী শুনাচ্ছেন৷ এরা মূর্খই শুধু নয়, এরা সেই বিশ্বাসঘাতকদের উত্তরসূরী, যারা 'হিন্দু-মুসলিম ভাই ভাই' এর গান শুনিয়ে শুনিয়ে হিন্দু সমাজকে বিভ্রান্ত করে পরোক্ষে ভারতভাগে মদত করেছে, লাখ লাখ হিন্দুকে মুসলিম ধর্মান্ধতার যূপকাষ্ঠে বলি দিয়েছে, হাজার হাজার হিন্দু মহিলার সম্ভ্রমকে মুসলমান জেহাদীদের হাতে উপঢৌকন দিয়েছে, লাখ লাখ হিন্দুর কপালে উদ্বাস্তুর কলঙ্কচিহ্ন এঁকে দিয়েছে৷ এরা না পড়েছে কোরাণ, না পড়েছে হাদীস৷ কিন্তু এরা স্বপ্নাদেশে জানতে পেরেছে যে গীতায় যা লেখা আছে কোরাণেও তা ই লেখা আছে! এরা কোন এক অজানা উপায়ে উপলব্ধি করেছে যে সনাতন হিন্দুর দর্শন আর ইসলামের দর্শনের সারমর্ম একই!

অদ্বৈতবাদ হিন্দু দর্শনের core৷ কিন্তু পাশাপাশি দ্বৈতবাদও স্বীকৃত৷ একং সদ্ বিপ্রা বহুধা বদন্তি৷ মানে সত্য এক হলেও জ্ঞানীরা তাকে বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করেন৷ তাই ভারতে নিরাকার ব্রহ্মের উপাসনা থেকে শুরু করে সাপ এমনকি গাছের পূজাকেও সমান চোখে দেখা হয়৷ তেত্রিশ কোটি দেবতা, মানুষ (কুমারী পূজা), পাথর, মাটি, জীবজন্তু, গাছ-গাছড়া - যা ই পূজা করুক না কেন, হিন্দু সবের মধ্য সেই একই সত্যের অস্তিত্বকে উপলব্ধি করে৷ তাই তারা ভাবে আল্লা ও গড্ও সেই সত্যেরই প্রকাশ৷ তাই হিন্দু আল্লা ও গড্ এর উপাসনাকেও ঈশ্বরের উপাসনা মনে করেই শ্রদ্ধা করে৷ এটা সহিষ্ণুতা নয়, শ্রদ্ধা৷ এই কারণেই হিন্দু দর্শন বিশ্বজনীন৷

কিন্তু ইসলামের দর্শনের বিকাশ এই উচ্চতায় কোনদিন পৌঁছায় নি৷ আর পৌঁছাতে পারবেও না৷ কারণ নবী নিজেই বলে গেছেন যে কোরাণ হচ্ছে স্বয়ং আল্লার মুখ নিঃসৃত বাণী৷ এই বাণী শুনেছেন নবী নিজে৷ এবং মহম্মদের পরে আর কোন পয়গম্বর অর্থাৎ আল্লার বার্তাবাহী জন্মাবেন না৷ কারণ তিনিই সর্বশেষ পয়গম্বর৷ তাই যেহেতু পরে আল্লা যদি কোরাণের modification করেন বা যুগোপযোগী নতুন কোন নির্দেশ দেন, তা মানুষের কাছে পৌঁছাবে কি করে? তাই মুসলমানদের কাছে কোরাণের কথাই সর্বকালীন মান্য৷ এর পরে কিছু থাকতে পারে না৷ তাই কোরাণের মাধ্যমে আল্লা যখন বলেন, "আল্লাহ কেবল শিরক্ (অংশিদারী) এর পাপকেই মাফ করেন না৷ এছাড়া আর যত পাপ আছে তা - যার জন্য ইচ্ছা মাফ করে দেন৷ যে লোক আল্লাহ-র সাথে অন্য কাউকে শরীক করলো সে তো বড় মিথ্যা রচনা করলো, এবং বড় কঠিন গুনাহের কাজ করলো"(সুরা ৪, আয়াত ৯৫), তখন বিশ্বের সমস্ত অমুসলমানদেরকে পাপী এবং আল্লার ক্ষমার অযোগ্য নিকৃষ্ট শ্রেণির বলে মনে করা ছাড়া মুসলমানদের সামনে কোন বিকল্প থাকে না৷ আল্লার পাশে অন্য কিছুকে ঈশ্বরের আসনে বসালেই সে ক্ষমার অযোগ্য! কোরাণের ছত্রে ছত্রে আল্লা যখন কাফির অর্থাৎ অমুসলমানদের শাস্তি দেওয়া, হত্যা করাকে মোমিন অর্থাৎ মুসলমানদের কর্তব্য বলে ঘোষণা করেন, তখন মুসলমানদের সেই নির্দেশকে শিরোধার্য করা ছাড়া পুণ্যলাভের অন্য কোন পথ থাকে না৷

তাই হিন্দুর দর্শন আর ইসলামের দর্শনের সারমর্ম মোটেই এক নয়, বরং ঠিক বিপরীত৷ হিন্দু দর্শন শেখায় অন্যান্য মতকে শ্রদ্ধা করতে৷ সেখানে ইসলামের শিক্ষা হল অন্যদেরকে শাস্তি দাও, হত্যা কর৷ এখন কোরাণ হাদীসে যদি খারাপ কিছু লেখাও থাকে, হিন্দু শাস্ত্রেও তো অনেক কিছু লেখা আছে যা গ্রহণযোগ্য নয়৷ তাহলে ২০১৫ সালে, আজকে সেই সব শাস্ত্রবাক্য ক'জন মেনে চলে? এই প্রশ্ন নিশ্চই কোন মুক্তমনা করবেন৷ তাদের মনে রাখা উচিত, হিন্দুর শাস্ত্র না মানার অধিকার, এমনকি প্রকাশ্যে বিরোধিতা করার স্বাধীনতাও হিন্দু শাস্ত্রস্বীকৃত বলেই আপনারা ভারতের বুকে নির্ভয়ে বেঁচে আছেন৷ পক্ষান্তরে যারাই আল্লার নির্দেশ অমান্য করার দুঃসাহস দেখাবে আল্লার বাণী অনুসারে তারা হয়ে যাবেন মুর্তাদ অথবা মুনাফিক৷ এই মুর্তাদ এবং মুনাফিকদের প্রাপ্য হল কঠোর থেকে কঠোর তর শাস্তি৷ এর বাস্তব প্রয়োগ আমরা তসলিমা, হুমায়ুন আজাদের ক্ষেত্রে হতে দেখেছি৷ তার সাম্প্রতিকতম উদাহরণ হল ওয়াশিকুর রহমান বাবুর নৃশংস হত্যাকান্ড৷
তাহলে মডারেট কখনও মুসলিম হতে পারে না, আর কোন মুসলিম মডারেট হওয়ার চেষ্টা করলেই সে আর মুসলিম থাকতে পারে না, সে হয়ে যায় মুর্তাদ অথবা মুনাফিক৷ বিখ্যাত ইসলামিক স্কলার জাকির নাইক সাহেবের কথায় - মডারেট মুসলিম বলে কোন কিছুর অস্তিত্ব নেই, আছে শুধু practing, partly practicing আর non practicing মুসলিমের অস্তিত্ব৷ এই partly আর non practicing মুসলিমদের practicing মুসলিমে রূপান্তর শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা৷