Monday, January 27, 2020

যদি বাঙাল হিসেবে গর্ব করতেই হয়, সেটা ঢাকার ধানমন্ডিতে দাঁড়িয়ে করবো

আমি একজন সনাতনী। আমি একজন বাঙ্গালী, বিশেষত একজন বাঙাল। প্রত‍্যেকটা আইডেন্টিটি আমার কাছে সমান গুরুত্বের। বাঙাল হিসেবে গর্ব করার মত অনেক কিছুই আছে আমাদের, যা 'অবাঙাল' দের কাছে ঈর্ষণীয়। কিন্তু যেদিন পায়ের তলার মাটি হারিয়েছি, সেদিন থেকে আমাদের এই গৌরবময় ইতিহাস নিয়ে গর্ব করার অধিকার আমরা হারিয়েছি। পরাজিত জাতি যতক্ষণ পর্যন্ত বিজেতাকে পদানত করে নিজের অধিকার ছিনিয়ে নিতে না পারে, ততক্ষণ পর্যন্ত তার গর্ব করার কিছুই থাকতে পারে না।
পরাজিত জাতির মধ্যে যেমন বিনয়-বাদল-দীনেশ-মাস্টারদা জন্মান, সেইরকমই অসংখ্য নেত্রসেন, জ্যোতি বোস, সুজন চক্রবর্তীরাও জন্মগ্রহণ করেন। আমি প্রথম দলেই নাম লিখিয়েছি। যে মাটি আমাকে ঠাঁই দিয়েছে তাকে রক্ষা করা এবং বাপ-ঠাকুরদার হারানো মাটি পুনরায় অধিকার করার জন‍্য‌ই আমার এই লড়াই। মৌলবাদী ইসলামের কারণে আমার প্রতিটি আইডেন্টিটি আজ বিপন্ন। এই লড়াইয়ে আমি সনাতনী মূলের প্রত্যেককে সাথে চাই।
যদি বাঙাল হিসেবে গর্ব করতেই হয়, সেটা ঢাকার ধানমন্ডিতে দাঁড়িয়ে করবো, রমনা কালীমন্দিরে মায়ের পূজা দিয়ে করবো। আমি না পারলে আমার ছেলে, সে না পারলে তার ছেলে করবে। কিন্তু ঘরে একদিন আমরা ফিরবোই। ততদিন শুধুই লড়াই, শুধুমাত্র লড়াই।

রক্ত দিয়ে কেনা মাটি কাগজ দিয়ে নয়


কলকাতার ডার্বি চলছে। রক্ত দিয়ে কেনা মাটি কাগজ দিয়ে নয় লেখা একটি ব্যানার শোভা পাচ্ছে ইস্টবেঙ্গল গ্যালারির মাথায়। ম্যাচ শেষ হতে না হতেই নেট দুনিয়ায় ব্যাপক আলোড়ন। কে জিতলো, কে হারলো সেটা হয়ে গেল গৌণ। বাঙালীর ফুটবলের আবেগ রূপ নিলো রাজনীতির তড়জায়!

এই ব্যানারটা লাগিয়েছিলো ইস্টবেঙ্গল আল্ট্রাস্ নামের একটি গ্রুপ। এরা মূলতঃ বামপন্থীদের একটা গোষ্ঠী। যদিও বামপন্থীরা বর্তমানে লুপ্তপ্রায়, তবে যেকজন টিকে আছে তারা কুমীরের ছানার মত সময় ও সুযোগ বুঝে বিভিন্ন মঞ্চে হাজির হয়ে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দেওয়ার চেষ্টা করে চলেছে কারণ তাদের দীর্ঘজীবী বিপ্লব এখন সাত পার্সেন্টে এসে ঠেকেছে। আর সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন প্রণয়নের পরে তারা এখন একেবারে চোরাবালির উপরে দণ্ডায়মানএই সাত পার্সেন্ট কমতে কমতে ২০২১-এ যে দুই পার্সেন্টেও টিকবে না – এটা তারা ভালোভাবেই বুঝতে পারছে। তাই এখন যেকোনো ভাবে ভেসে থাকতে হবে, খবরে থাকতে হবে, চর্চায় থাকতে হবে। তাই কিছুটা অক্সিজেন পাওয়ার আশায় ডার্বির মাঠে সিএএ বিরোধী ব্যানার টাঙানো

আমাদের ছোটবেলায় পাড়ার কিনুকাকা আমাদের জোকস্ শুনাতেন, আমরাও আগ্রহ সহকারে সেগুলো রীতিমত গিলতাম। একদিন কিনুকাকা শুরু করলেন; বুঝলি, একবার একটা ইন্টারন্যাশনাল লেভেলে একটা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে কলকাতায়বিষয় হল কার টেকনোলজি কত উন্নত। জাপানের বৈজ্ঞানিকরা এমন একটা সূঁচ তৈরি করে ফেললো যে সেটা খালি চোখে দেখাই যায় না! তখন আমেরিকার বৈজ্ঞানিকরা এগিয়ে এলো। সবাইকে আশ্চর্য করে দিয়ে তারা সেই সূঁচের মধ্যে একটা ফুঁটো করে দিলো। ব্যাস্! পৃথিবীর সব দেশের বৈজ্ঞানিকরা হাত তুলে দিলো। সেরা পুরষ্কার আমেরিকার সেই বৈজ্ঞানিকের হাতে তুলে দেওয়া হবে, ঠিক সেই মূহুর্তে আমাদের ১০নং ওয়ার্ডের সর্বহারার নেতা কমরেড বিভাসদা বিড়ি ফুঁকতে ফুঁকতে একেবারে মঞ্চের উপরে এসে হাজির! দাদা একটা চান্স্ দেবেন আমায়? না হলে কিন্তু ইউনিয়নের লোক ডেকে সব ভন্ডুল করে দোবো বলেদিলাম! অগত্যা, সেই সূঁচ তুলে দেওয়া হল কমরেড বিভাসের হাতে। কারণ রাজ্যে তখন মানুষের শরীরের রক্ত বাদে সবকিছুই লাল। কমরেড তখন পকেট থেকে বিড়ির প্যাকেটটা বের করে তার মধ্যে সুঁচটা ঢুকিয়ে দিলো আর সেই প্যাকেটের উপরে লিখে দিলো Made in China’ তারপর হাত মুঠো করে আকাশে ঘুষি মেরে বললো চিনের চেয়ারম্যান, আমাদের চেয়ারম্যান!

এটাই বাম-বামাতিদের সংস্কৃতি। অন্যের প্রডাক্টে নিজেদের ট্রেডমার্ক লাগিয়ে বেচে দেওয়াটাই তাদের বিপ্লবের কঠিন পথ। আপনি দুর্গাপূজা করুন, এরা সেই আসরে নিজেদের ধর্ম মানে আফিম শীর্ষক বই বেচতে চলে আসবে। আপনি পাড়ায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করুন, সঙ্গে সঙ্গে পাড়ার দুজন কমরেডকে মঞ্চে তুলে ওরা জীবনের গান গাইতে দেয় না অথবা হেনরির হাতুড়ি গাইয়ে আপনার মঞ্চটাকেই ওদের বিপ্লবী মঞ্চে পরিণত করার চেষ্টা করবে। একই ভাবে ডার্বির মাঠে ওদের প্রথম লক্ষ্য ছিল মিডিয়া অ্যাটেনশন, আর দ্বিতীয় লক্ষ্য ছিল নিজেদের মতামতটাকে গোটা ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের মতামত বলে চালিয়ে দেওয়া, যেন গোটা ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের সভ্য-সমর্থক তথা বৃহত্তর ইস্টবেঙ্গল সমাজ (ওপার বাংলা থেকে আসা উদ্বাস্তু সমাজ)-এর প্রতিনিধিত্ব ওরাই করছে। এটা ছিলো গোটা ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের উপরে সিএএ বিরোধী তকমা লাগিয়ে দেওয়ার একটা অপচেষ্টা।

এতো গেল বাম-বামাতিদের দুর্বুদ্ধির কথা। এবার আসি রক্ত দিয়ে মাটি কেনার বিষয়ে। বলুন তো এপারে এসে মাটি কিনতে কতজনকে ক‌ফোঁটা রক্ত দিতে হয়েছে! উদ্বাস্তুদের এপারে থাকার জন্য কার সাথে লড়াই করতে হয়েছে? যদি কেউ এই উদ্বাস্তুদের রক্ত ঝরিয়ে থাকে, তারা হল এই বামপন্থীরাই! মরিচঝাঁপির ইতিহাস নিশ্চই আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না! আজকে তারাই বলছে রক্ত দিয়ে কেনা মাটি! তাই এই রক্ত দিয়ে মাটি কেনার দাবী বাম-বামাতিদের মুখে শোভা পায় নাআর যদি পরিশ্রম ও কষ্টকে রক্তমূল্য ধরা হয় তাহলে এই কষ্টের কারণ কি? এই পরিশ্রম কেন? কেন গোলাভরা ধান আর পুকুর ভরা মাছ ওপারে ফেলে এপারে আসতে হল? কারা সেগুলো কেড়ে নিয়েছিল? কারা তাদের বাড়িতে আগুন দিয়েছিল? কারা তাদের বাপ-ঠাকুরদাকে খুন করেছিল? কারা তাদের পরিবারের মহিলাদের ধর্ষণ করেছিল? কারা তাদের রক্ত ঝরিয়েছিল? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর কি তাদের অজানা? যারা আজ বড় গলায় বলছে রক্ত দিয়ে কেনা মাটি তাদের বলতে চাই, রক্ত দিয়ে মাটি তোমরা কেনো নি ভাই, তোমাদের রক্ত সিঞ্চিত মাটি মুসলমানরা তোমাদের কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে। আজ একথা স্বীকার করার মত সাহসও তোমাদের নেই। মাস্টারদা সূর্যসেন, লোকনাথ বল, প্রীতিলতাদের রক্তসিঞ্চিত সেই জালালাবাদের মাটির অধিকার দাবী করার সতসাহস আছে তোমাদের? বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তোমাদের পূর্বপুরুষ যাঁরা আত্মবলিদান দিয়েছিলেন, তাদের রক্তস্নাত মাটির অধিকার দাবী করার সতসাহস আছে ভাই? তাদের রক্তের মূল্য কি তোমরা কোনও দিন দিয়েছো বা ভবিষ্যতেও কোনও দিন দিতে পারবে? তাই রক্তদানের কথা আজ তোমাদের মুখে শোভা পায় না। তোমরা আগাপাস্তলা ভণ্ড।

রইলো কাগজের কথা। আজও ঠাকুরদার পুরোনো টিনের বাক্সটা হাতিয়ে দেখো। যশোর কিংবা ময়মনসিংয়ে ফেলে আসা ভিটের কাগজটা সযত্নে রাখা আছে হয়তো। আজও আশা আছে, যদি কোনোদিন এই কাগজের মূল্য পাওয়া যায়! আমি শুনেছি একটা রিফিউজি সার্টিফিকেটের জন্য হন্যে হয়ে সরকারী অফিসের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়ানোর ইতিহাস। আমি দেখেছি এনিমি প্রোপার্টির কাগজ নিয়ে সরকারী অফিসের সামনে লম্বা লাইন দিয়ে মানুষকে দাঁড়িয়ে থাকতে। যদি এই কাগজের বিনিময়ে ক্ষতিপূরণ বাবদ কিছু অর্থমূল্য পাওয়া যায়! ওপার থেকে এপরে এসে একটা জাল রেশন কার্ড, একটা জাল ভোটার কার্ড নিদেনপক্ষে একটা ভুয়ো স্কুল সার্টিফিকেটের জন্য কী পরিমান ছোটাছুটি মনে নেই! সেগুলোও তো নিছক কাগজই, তাই নয় কি? সুতরাং ওপার থেকে এপারে আসার পর আজ তোমরা যে জায়গায় দাঁড়িয়ে আছো, তোমাদের পূর্বসুরীদের মেধা এবং পরিশ্রমের বেশীরভাগটাই খরচ হয়েছে কাগজ যোগাড় করার জন্য।

সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন জাতীয়তাবাদী শক্তি (Making India Force)এবং জাতীয়তাবিরোধী শক্তিকে (Breaking India Force)- এই দুটি শিবিরে ভাগ করে দিয়েছে। আজ সময় এসেছে, আমাদের সঠিক পক্ষ বেছে নেওয়ার। বন্ধ্যা নারীর যেমন গর্ভযন্ত্রণার বিবরণ দেওয়া বাতুলতা মাত্র, ঠিক সেইভাবেই সেকুলার বাঙালদের মুখ দিয়ে রক্তের মূল্য সম্পর্কে বেশী কিছু প্রকাশিত না হওয়াই ভাল। যারা বৈধ নাগরিকত্বের প্রস্তাবের বিরোধিতা করে এবং জাল কাগজের ভিত্তিতে বেঁচে থাকাকে সম্মানজনক মনে করে, শেষপর্যন্ত কি তাদের কাছে রক্তের মূল্য সম্পর্কে শিক্ষা নিতে হবে! এরা আসলে টুকড়ে টুকড়ে গ্যাং’-য়ের স্লিপার সেল। এদের চিহ্নিত করতে হবে এবং এদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। পরিশেষে বলতে চাই সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনকে দুহাত তুলে স্বাগত জানান এবং নিশ্চিতভাবে জানুন, এই আইনই বাস্তবে ছিন্নমূল ভারতপ্রেমীদের রক্তের মূল্য এবং মর্যাদা দিয়েছে।              

x