Saturday, August 31, 2019

এন‌আরসি, আসাম এবং বাঙালি হিন্দু

আসামে এন‌আরসি এক কথায় পর্বতের মূষিক প্রসব। বরং এই এন‌আরসি-র ফলশ্রুতিতে বাঙালি হিন্দুদের একটা বিরাট অংশ ( সেটা ৯ লাখ না ১১ লাখ জানিনা) আজ অনিশ্চয়তার সামনে। হিন্দু সংহতি এদের পাশে থাকবে। ভারতে থাকার অধিকার এদের আছে, সেই অধিকার আদায় করার লড়াইয়ে আমরা সাথে ছিলাম, আছি  আর থাকবো।

৩৭০ ধারা রদ হলো। সারা দেশে 'এক নিশান, এক বিধান, এক প্রধান' প্রতিষ্ঠিত হ‌ওয়ার দিকে আমরা একধাপ এগিয়ে গেলাম। আর আজ বিজেপি শাসিত আসামে কেন্দ্রের 'পাসপোর্ট আইন ২০১৫' মূল্যহীন! এই আইনে বাংলাদেশ থেকে ধর্মীয় কারণে বিতাড়িত হিন্দুরা ভারতে আশ্রয় নিলে তাদের ভারতে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সারা ভারত এই আইন মেনে চলবে, আর আসামে তা চলবে না, চলবে 'আসাম চুক্তি'! বিজেপির   কেন্দ্রীয় সরকার প্রণোদিত 'পাসপোর্ট আইন ২০১৫' কে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বিজেপি শাসিত আসাম রাজ্যে এন‌আরসি-র ভিত্তি আজ কংগ্রেস জমানার সেই 'আসাম চুক্তি'! কেন্দ্রের এই আইনের সুবিধা সারা ভারতের হিন্দু শরণার্থীরা পাবে, কিন্তু আসামের বাঙালি হিন্দু শরণার্থীরা পাবে না!

এই বৈষম্য চলবে না। আমরা আসামের শরণার্থী হিন্দুদের প্রতি এই বৈষম্যমূলক আচরণের তীব্র বিরোধিতা করছি। কেন্দ্রীয় সরকার এবং আসামের রাজ্য সরকারের কাছে আমাদের আবেদন, একজন শরণার্থী বাঙালি হিন্দুকেও যেন বিদেশী বলে গ্রেফতার অথবা বিতাড়িত করা না হয়। পাশাপাশি এই বৈষম্যের বিরুদ্ধে হিন্দু সংহতি শীঘ্রই সুপ্রিম কোর্টে জনস্বার্থে মামলা দায়ের করতে চলেছে।

কিন্তু সব থেকে বড় প্রশ্ন, যে কয়েক লাখ হিন্দুর নাম বাদ গেল, তারা কি করবে? হয় তাদের বৈধ কাগজপত্র দিয়ে প্রমাণ করতে হবে যে তারা বিদেশী নয়। অথবা তাদের মুক্তকন্ঠে স্বীকার করতে হবে যে তারা বাংলাদেশ থেকে ধর্মীয় কারণে বিতাড়িত হয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। এই লক্ষ লক্ষ বাঙালি হিন্দু রাস্তায় নামবেন? অন্তত এদের ১০-১৫% লোক? বড় কঠিন প্রশ্ন! রোহিঙ্গাদের দেখছি আর অবাক হচ্ছি। বুক ঠুকে বলে বেড়াচ্ছে, হ্যাঁ আমরা বিতাড়িত। থাকতে দিতে হবে, সুযোগ সুবিধা দিতে হবে, জল দিতে হবে, খাবার দিতে হবে। সবাই দিচ্ছেও ওদের! কতজন ওরা সর্বসাকুল্যে? আর আমরা আসামে কত লক্ষ? ওরা পারছে, আমরা পারছি না কেন?

Wednesday, August 28, 2019

পশ্চিমবঙ্গে জনজাগরণ

পশ্চিমবঙ্গে জনজাগরণ! এর মানে কি? বাঙালির জাগরণ ঘটানোর দরকার আছে? বাঙালি এত যন্ত্রণা বুকে নিয়ে ঘুমিয়ে থাকে কিভাবে? দেশ হারিয়ে উদ্বাস্তু হ‌ওয়ার যন্ত্রণা! প্রিয়জনের নির্মম হত্যা, ধর্ষণের প্রত্যক্ষদর্শী হ‌ওয়ার যন্ত্রণা! শরীরের রক্ত জল করে গড়ে তোলা বাড়ি, ব্যবসা হাতছাড়া হয়ে যা‌ওয়ার যন্ত্রণা! কার‌‌ও দিদি, কার‌ও বোনকে ভাগ করে নিলো ওরা নিজেদের মধ্যে গণিমতের মাল হিসেবে। এদিকে অসহায়, ফ্যালফ্যাল করে পিছনের দিকে তাকাতে তাকাতে কাঁটাতার পেরিয়ে এপারে চলে আসা বাঙালি, বুকে আজও সেই অব্যক্ত যন্ত্রণা নিয়ে ঘুমিয়ে থাকে কিভাবে? ওপারে মালাউনের বাচ্চা, এপারে রিফিউজির বাচ্চা তকমা নিয়ে বাঙালি ঘুমায় কিভাবে! ওপারের নোয়াখালী, ভৈরবের চরের রক্তাক্ত পথ ধরে এপারের নলিয়াখালি, দেগঙ্গা, বাদুড়িয়া, ধূলাগড়, বগাখালিতে পৌঁছে বাঙালি আজ ঘুমিয়ে থাকে কিভাবে! আমি বিশ্বাস করি না বাঙালি ঘুমিয়ে আছে। তাই তাকে জাগানোর চেষ্টা করোর কোনও প্রয়োজন নেই। বাঙালি প্রতি মুহূর্তে চিৎকার করে তার যন্ত্রণাকে ব্যক্ত করতে চায়। কিন্তু তার কথা শোনে কে? সেকুলারিজম আর লিবারালিজমের ভন্ডামির ঢাকের আওয়াজে বাঙালির এই চিৎকার চাপা পড়ে আছে আজও। তাই প্রশ্ন হলো আজ কে কাকে জাগাবে? যারা জনজাগরণ করতে চাইছে তারা নিজেরাই আগে জাগ্রত হয়ে কান পাতুক বাঙালির মনের মণিকোঠায়। জানার চেষ্টা করুক বাঙালির সামনে প্রায়োরিটি কি - রাজ্যব্যাপী অসংখ্য স্থানে মগরাহাটের সেলিম, জীবনতলার সৌকত মোল্লা, সরবেড়িয়ার সাজাহান শেখ, হাসনাবাদের বাবু মাস্টার, কীর্ণাহারের মনিরুল, ভাঙ্গড়ের আরাবুল-কাইজার, মিনাখাঁর আয়ুব গাজীদের পরিচালিত সমান্তরাল জেহাদী শাসনের অবসান, নাকি ইলেকট্রিক বিলের খরচা কমানো।

Tuesday, August 27, 2019

বাঙালি হিন্দুদের নাগরিকত্ব সুনিশ্চিত না করে পশ্চিমবঙ্গে এন‌আরসি করার চেষ্টা হলে তার তীব্র বিরোধিতা করা হবে

আসামে ‌এন‌আরসি-র চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত হতে চলেছে ৩১শে আগষ্ট। এই তালিকা অনুযায়ী যাঁঁরা বিদেশী বলে ঘোষিত হবেন, সরকার তাঁঁদের আশ্বস্ত করেছে যে তাঁঁরা ট্রাইব্যুনালে আবেদন করে নিজেদের নাগরিকত্ব প্রমাণ করার সুযোগ পাবেন। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে আগত শরণার্থী বাঙালি হিন্দুদের, যাঁঁরা ৭১এর পরে ভারতে এসেছেন, তাঁঁদের জন্য কি ধরণের সুরক্ষা কবচ থাকছে সে সম্পর্কে আমার এখনও কোনও স্পষ্ট ধারণা নেই। কারণ নাগরিকত্ব আইন এখনও প্রণয়ন করা সম্ভব হয় নি, আর আগের টার্মে মোদি সরকার যে নোটিফিকেশন জারি করে সাময়িক ভাবে উদ্বাস্তু হিন্দু বাঙালিদের একটা সুরক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিল, সেটাও এখন বলবৎ আছে কি না জানি না। অবশ্য এই নোটিফিকেশন আসামে কতটা কার্যকরী ছিল, সেটাও একটা বড় জিজ্ঞাসা। তাই শেষ পর্যন্ত কী দাঁড়াবে সেটা এখন কেউ সঠিকভাবে বলতে পারবে বলে মনে হয় না। তবে ৩৭০ ধারা বিলোপকারী এই কেন্দ্রীয় সরকারের যে একটা সদিচ্ছা আছে এ ব্যাপারে কোনও সন্দেহের অবকাশ নেই। বস্তুতঃ একমাত্র এই সদিচ্ছাই এখন আসামের বাঙালি হিন্দুর সব থেকে বড় ভরসা। এখন মোদি-শাহ্ যদি সর্বোচ্চ আদালতের কোর্টে বল ঠেলে দেন, সেটা হবে বাঙালি হিন্দুর ইতিহাসে সবথেকে বড় বিশ্বাসঘাতকতা।

আসামের উদ্বাস্তু বাঙালি হিন্দুর কি হতে চলেছে সেটা সময় বলবে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গেও তো এন‌আরসি হ‌ওয়া দরকার। আমরা প্রথম থেকেই বলে এসেছি জাতীয় স্বার্থে এন‌আরসি চাই। ভারতবর্ষ সরাইখানা নয়। রাজ্য থেকে অবৈধ মুসলিম অনুপ্রবেশকারীদের তাড়াতে হবেই। পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্যার ভারসাম্য নষ্ট হয়ে গেছে এই অবৈধ অনুপ্রবেশের ফলে‌। ১৯৪৭ এর ২০শে জুন প্রস্তাবিত পাকিস্তানের বুক চিরে এই পশ্চিমবঙ্গের জন্ম‌ই হয়েছিল বাঙালি হিন্দুর হোমল্যান্ড হিসেবে। কিন্তু আমরা দেখছি দেশভাগের পর থেকে আজ পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে অত্যাচারিত উদ্বাস্তু হিন্দু জনস্রোতকে টেক্কা দিয়ে লাগাতার অবৈধ মুসলিম অনুপ্রবেশ ঘটে চলেছে আমাদের রাজ্যে। পশ্চিমবঙ্গের তিনটি জেলায় ইতিমধ্যেই বাঙালি হিন্দুরা সংখ্যালঘু হয়ে পড়েছে।  এক‌ই চিত্র বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন বেশিরভাগ ব্লকে। এই পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি চরিত্র বজায় রাখতে হলে অবিলম্বে এন‌আরসি শুরু করা আবশ্যক। কিন্তু আমরা ঘর পোড়া গরু। আসামে উদ্বাস্তু বাঙালি হিন্দুরা যে অনিশ্চয়তার সামনে পড়েছে, আমাদের রাজ্যে যাতে তা না হয়, তারজন্য ভাবত হবে বৈকি! তাই  আমরা মনে করি বাংলাদেশ থেকে যে অত্যাচারিত বাঙালি হিন্দুরা শরণার্থী হিসেবে এই পশ্চিমবঙ্গে আসতে বাধ্য হয়েছে, তাদের ভারতের নাগরিকত্ব দেওয়ার বিষয়টাকে প্রাথমিকতা দিতে হবে।

আমাদের স্পষ্ট দাবি - প্রথমে পশ্চিমবঙ্গে আগত শরণার্থী বাঙালি হিন্দুদের নাগরিকত্ব সুনিশ্চিত করতে হবে। তারপরে এন‌আরসি শুরু করতে হবে। তা না হলে বাঙালি হিন্দুরা ব্যাপক অনিশ্চয়তার মুখে পড়বে। বাঙালি হিন্দুদের নাগরিকত্বের নিশ্চয়তা শুধুমাত্র মৌখিকভাবে দিলে হবে না। আগে নাগরিকত্ব আইন পাশ করাতে হবে, তারপরে এন‌আরসি। নাগরিকত্ব আইন প্রণয়ন না করে পশ্চিমবঙ্গে এন‌আরসি চালু করার চেষ্টা করলে হিন্দু সংহতি তার তীব্র বিরোধিতা করবে।

Wednesday, August 14, 2019

হিন্দু সংহতি প্রযোজিত তথ্যচিত্র

১৯৪৬ এর ১৬ই আগষ্ট আমার  জাতিসত্তাকে খুন করার দিন। বিশ্বাসঘাতক মুসলিম লীগের হিন্দু গণহত্যার দিন। কল্লোলিনী তিলোত্তমা কলকাতাকে সনাতনী রক্তের নদীতে ভাসিয়ে দেওয়ার দিন। আবার ১৯৪৬ এর ১৬ই আগষ্ট আমাকে প্রতিরোধ গড়ে তোলার প্রেরণাও দেয়। আত্মবিস্মৃত বাঙলার হিন্দু সমাজকে নতুন করে জিহাদী অত্যাচারের ইতিহাসের সামনে বার বার দাঁড় করিয়ে দেওয়ার জন্যই হিন্দু সংহতির জন্ম। হিন্দু সংহতির জন্ম নতুন ইতিহাস গড়ার জন্যও। অবশ্যই দেখুন ও শেয়ার করুন
হিন্দু সংহতি মিডিয়া প্রোযোজিত
ডকুমেন্টারি,
" রক্ত শোধের দিন, ১৬ই আগষ্ট।"

Tuesday, August 13, 2019

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি

বাংলাদেশের পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগজনক। আমার সাধারণ বুদ্ধিতে ওখানে হিন্দুর শেষ হয়ে যাওয়া শুধু সময়ের অপেক্ষা। ভারত সরকার হয়তো পাশেই চিনের উপস্থিতির কথা ভেবে বাংলাদেশের হাসিনা সরকারকে ফেভার করছে। কিন্তু সেখানকার হিন্দুদের নিরাপত্তা বলে আর কিছুই নেই।

একটা আন্তর্জাতিক চাপকে সামনে রেখেই এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করা সম্ভব। তারজন্য এপারে পালিয়ে আসা হিন্দুদের একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে বলে আমি মনে করি।

এদেরকে ভারতে একটা হলফনামা দিয়ে স্বীকার করতে হবে যে তারা ওপারে ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে অত্যাচারিত হয়ে অথবা সম্ভাব্য অত্যাচারের আশঙ্কায় ভারতে এসেছে।

কয়েক লাখ হলফনামাকে ভিত্তি করে একটা বিরাট আন্তর্জাতিক চাপ বাংলাদেশ সরকারের উপরে সৃষ্টি করা সম্ভব। সেক্ষেত্রে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ইস্যুতে চিনের হস্তক্ষেপকেও আটকানো যেতে পারে। তখন অনেকগুলো বিকল্প পথ হিন্দুদের সামনে খুলে যাবে বলে আমার ধারণা -

১) হিন্দুদের জন্য কয়েকটি স্বায়ত্বশাসিত জেলা এবং সেই জেলাগুলোতে ভারতীয় সেনার উপস্থিতি।

২) বাংলাদেশ ভেঙে হিন্দুদের জন্য একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র গঠন, পরে ভারতের অন্তর্ভূক্তি।

আজকে অবাস্তব মনে হলেও একেবারে অসম্ভব নয়। কিন্তু বাঙালি হিন্দু নিজের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য কতটা মরিয়া হয়ে উঠতে পারবে, সবটাই তার উপরে নির্ভর করছে।

Sunday, August 11, 2019

শিয়ালদহ রেল স্টেশন‌ই বাঙালি-হিন্দু নির্যাতনের আদর্শ স্মারক

দেশভাগের সময় থেকে আজ পর্যন্ত বাংলাদেশে বাঙালি হিন্দুদের যে অত্যাচারের শিকার হতে হয়েছে, তার থেকে বড় মানবাধিকার লঙ্ঘনের ইতিহাস এই পৃথিবীতে আর নেই। হিন্দু হলোকাস্টের স্মৃতিস্বরূপ একটা মনুমেন্ট এই পশ্চিমবঙ্গে থাকার দরকার ছিলো না? আপনারা সেই ভয়াবহ স্মৃতি ভুলে যেতে চান? আগামী প্রজন্মেকে সেই ইতিহাস ভুলিয়ে দিতে চান?ইতিহাসকে ভুলিয়ে দেওয়ার অর্থ আগামী প্রজন্মকে সেই একই  ঐতিহাসিক পরিস্থিতির শিকার হ‌ওয়ার‌ দিকে ঠেলে দে‌ওয়া।

হিন্দু সংহতি সেই ইতিহাস ভুলতে দেবে না। আমরা মনে করি এই ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে বাঙালি হিন্দু আবার ঘুরে দাঁড়াবে, যেভাবে ১৯৪৬ এ গোপাল মুখার্জীর নেতৃত্বে রুখে দাঁড়িয়েছিলো। বাঙালি হিন্দু যে জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরি, নির্মম-নিষ্ঠুর ভিসুভিয়াস্ - এই উপলব্ধি বাঙালি হিন্দুর না হলেও সুরাবর্দী সহ মুসলিম গুন্ডাদের সেদিন নিশ্চিতরূপে হয়েছিলো। মাথায় হাত দিয়ে লালবাজারে বসে পড়েছিলেন তিনি। বাঙালি আজ উদাসীন, হতাশ তার কারণ বাঙালির ইতিহাস বিস্মৃতি। এই ইতিহাস ভুলতে দেওয়া যাবে না।

দেশভাগের শিকার বাঙালি হিন্দুর উপরে অবর্ণনীয় অত্যাচারের স্মৃতি বহন করবে এই রকম একটা মনুমেন্ট এই কলকাতায় চাই ই চাই। আমার ধারণা এই ইতিহাসের সবথেকে বড় সাক্ষী এই শিয়ালদহ রেল স্টেশন। শিয়ালদহ রেল স্টেশন‌ই সেই আকাঙ্ক্ষিত মনুমেন্ট হতে পারে। আসুন, শিয়ালদহ রেল স্টেশনকে #ডঃ_শ্যামাপ্রসাদ_মুখার্জী_টার্মিনাস্ নামকরণ করার মাধ্যমে তাকে বাঙালি হিন্দুদের ইতিহাসের একটা গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের স্মারক হিসেবে গড়ে তোলার দিকে একধাপ এগিয়ে যাই।

Saturday, August 10, 2019

হালাল কি এবং কেন এটি বর্জন করা প্রয়োজন

অনেকের ধারণা একমাত্র জবাই করে কাটা পশুর মাংসই হলো হালাল। বাস্তবে হালাল শব্দের অর্থ ‘ইসলাম অনুযায়ী বৈধ’ অথবা ‘শরিয়া আইন দ্বারা অনুমোদিত’। ইসলামের অনুশাসন অনুযায়ী জীবনের সমস্ত ক্ষেত্রেই হালাল(বৈধ) এবং হারাম(অবৈধ) এর বিধান নিশ্চিত করে বলা আছে। মুসলমানদের জন্য সকালে ঘুম থেকে ওঠা থেকে শুরু করে রাতে ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত সব কার্যকলাপ ফরজ(কর্তব্য), মুস্তাহাব(প্রস্তাবিত), হালাল(বৈধ), হারাম(অবৈধ) এবং মক্রুহ্(বৈধ নয়, আবার একেবারে নিষিদ্ধও নয়)- এভাবে শ্রেণিবিন্যাস করা আছে।
খাদ্যের মধ্যে মূলতঃ শুকর, জবাই না করে কাটা পশুপাখী, আল্লাহ্-র নাম না নিয়ে জবাই করা পশুপাখী, রক্ত, নেশার বস্তু(মদ সহ), মৃত পশুপাখীর মাংস(তবে মৃত মাছ বাদে) – এগুলো হারাম। তবে কোরানে একথাও বলা আছে যে যখন হারাম খাবার না খেলে বেঁচে থাকা যাবে না, তখন জীবন রক্ষার্থে হারাম খাবারও হালাল হিসেবে খাওয়া যেতে পারে। এছাড়াও নামাজ পড়া, অজু করা, স্ত্রী সঙ্গম, লুটের মাল গ্রহণ থেকে শুরু করে মল-মূত্র ত্যাগেও হালাল-হারামের ব্যাপার স্যাপার আছে।
বিশ্বব্যাপী বিশাল মুসলিম জনসংখ্যা একটা লোভনীয় বাজার। এই বাজারকে কাজে লাগিয়ে ইসলামী উম্মা-র শক্তিবৃদ্ধি করা, বিশেষতঃ অমুসলমানদের কাছ থেকেও এই কাজে শক্তি সংগ্রহ করার কৌশলের নাম হলো হালাল সার্টিফিকেশন। পৃথিবীতে অনেকগুলো সংস্থা তৈরি করা হয়েছে বিভিন্ন প্রোডাক্ট, ব্র্যান্ড, রেস্টুরেন্টকে হালাল সার্টিফিকেট দেওয়ার জন্য। এই সার্টিফিকেটের বিনিময়ে মোটা টাকা বিভিন্ন কোম্পানীর কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়। বিশ্বব্যাপী মুসলিম জনবাজারে নিজেদের মাল বিক্রীর লোভে বড় থেকে ছোট অনেক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান এই হালাল সার্টিফিকেট কেনে মোটা টাকার বিনিময়ে। ভারতে হালাল সার্টিফিকেশনের বড় সংস্থাগুলি হলো গ্লোবাল ইসলামিক শরিয়া সার্ভিসেস্ (GISS), হালাল ফুড অথরিটি (HFA), জমিয়ত উলেমা–এ–হিন্দ হালাল ট্রাস্ট প্রভৃতি। আমরা অনেকেই কেএফসি, জোম্যাটো প্রভৃতি ব্র্যান্ডের খাবার খেয়ে থাকি, যে ব্র্যান্ডগুলো হালাল সার্টিফায়েড। এছাড়াও ভারতের ছোট-বড় অধিকাংশ হোটেল-রেস্টুরেন্টেই হালাল খাওয়ানোর প্রতিশ্রুতি বড় বড় হরফে লেখা থাকতে দেখা যায়। এখন পাড়ায় পাড়ায় মাংসের দোকানগুলোতেও হালাল ছাড়া পাওয়া যায় না। যদিও আগেই বলেছি হালাল সার্টিফিকেশন শুধুমাত্র খাদ্যাখাদ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। ওষুধপত্র, এফএমসিজি প্রোডাক্টও এর আওতায় পড়ে।
ষ্টেট অফ গ্লোবাল ইসলামিক ইকোনমী নামক সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী  বিশ্বব্যাপী হালাল সার্টিফায়েড  সামগ্রীর বাৎসরিক বাজার মূল্য ২.১ লক্ষ কোটি ডলারেরও বেশী। এই বিপুল টাকার একটা অংশ নিয়মিতভাবে কট্টর ইসলামিক সংস্থাগুলোর কাছে পৌঁছে যাচ্ছে, যারা হালাল সার্টিফিকেট দেওয়ার অধিকারী। এখন এই টাকা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ধর্মান্তরণের কাজে, শরিয়া আইন প্রচারের কাজে ব্যবহার হচ্ছে না কিংবা জাহাদী সন্ত্রাসবাদীদের হাতে অথবা ভারতের শত্রুদের হাতে পৌঁছে যাচ্ছে না তা নিশ্চিত করে কে বলতে পারে?
এবার একটু মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে দেখা যাক এই হালাল এবং আমাদের ঝটকা মাংসের বিষয়টাকে।  হালালের সময়, একটি ধারালো ছুরিকে প্রাণীটির গলায় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। তারপর ছুরিটিকে না তুলে বারবার গলায় চালানো হয় যাতে শ্বাসনালী, খাদ্যনালী, মস্তকে রক্তসংবহনকারী স্কন্ধদেশের ধমনী (carotid arteries), স্কন্দদেশের শিরা (jugular vein) এবং ভেগাস স্নায়ু খণ্ডিত হয়। এতে শরীর থেকে রক্ত নির্গত হতে থাকে এবং প্রাণীটি পরিণামে প্রাণ হারায়। এই পদ্ধতিকে বৈজ্ঞানিক পরিভাষায় বলে ventral neck incision (VNI)। এতে মেরুদণ্ডের স্নায়ুতন্ত্র প্রাণীটির মৃত্যু হওয়া পর্যন্ত অক্ষত থাকে। অপরপক্ষে আমাদের ঝটকা পদ্ধতিতে হত্যার সময়, ঘাড়ের পিছনের দিকে (dorsal neck) কাটা হয় যাতে মাথার খুলিকে মেরুদণ্ডের সুষুম্নাকাণ্ড (spinal cord) থেকে নিমেষে আলাদা করা হয়। কেবল ঘাড়ের কর্তন (cervical dislocation)-ই নয়, বরং এক আঘাতে মস্তকের শরীর থেকে বিচ্ছন্ন করাই এর উদ্দেশ্য। তাই এই পদ্ধতিতে ব্যবহৃত হয় অপেক্ষাকৃত ভারী এবং ধারালো অস্ত্র। সাধারণভাবে আমাদের শরীরের, আরও সঠিকভাবে বললে সোমাটিক কোষগুলো থেকে কোন অনুভূতি কিছু বিশেষ প্রোটিন (বৈজ্ঞানিক পরিভাষায়, cognate receptor proteins) লাভ করে যারা সেই অনুভূতিকে স্নায়ুর মাধ্যমে প্রেরণ করে। স্নায়ু আসলে কিছু নিউরোণ কোষের সমষ্টি মাত্র। স্নায়ু অনুভূতিকে মেরুদণ্ডের সুষুম্নাকাণ্ডের মাধ্যমে মস্তিষ্কে প্রেরণ করে। মস্তিষ্ক এই অনুভূতির প্রতিক্রিয়া সেই সুষুম্নাকাণ্ডের নিউরোণের মাধ্যমেই পাঠায় মাংসপেশীগুলিতে (effector muscles)। মাংসপেশীগুলি মস্তিষ্ক প্রেরিত বার্তাকে ক্রিয়াতে রূপ দেয়। হালালের সময় এই তীব্র যন্ত্রণার অনুভুতি পাঠানোর স্নায়ু বিচ্ছিন্ন হয় না। ফলে পশুটি সেই যন্ত্রণা সম্পূর্ণ সচেতনভাবে অনুভব করতে থাকে। পক্ষান্তরে ঝটকার সময় এই পথটিকে নিমেষের মধ্যে ছিন্ন করা হয়। ফলে ঝটকার সময় বলিপ্রদত্ত প্রাণীটির ব্যথার অনুভূতি সেই মুহূর্তেই হারিয়ে যায়। ব্যথা পরিমাপের এক স্বীকৃত পদ্ধতি হল ইইজি বা ইলেক্ট্রো এনসেফ্যালোগ্রাম। এই যন্ত্রটি মস্তিষ্কের নিউরোণের বৈদ্যুতিক বার্তাকে পরিমাপ করে। গরু বা ভেড়ার মত শান্ত প্রাণীরা তাদের যন্ত্রণার অনুভূতিকে বাইরে সবসময় প্রকাশ করে না। কিন্তু ইইজি পদ্ধতিতে তাদের ব্যথা স্পষ্টতই প্রকাশ পায়। বৈজ্ঞানিকরা দেখিয়েছেন যে ঝটকা পদ্ধতিতে প্রাণীবধ করলে শিরচ্ছেদের ৫ সেকেণ্ডের মধ্যেই মস্তিষ্কের (cerebral cortex) কার্য বন্ধ হয়। কিন্তু হালালের ক্ষেত্রে প্রাণীটি অনেক সময়ে তার শরীর থেকে চামড়া ছাডিয়ে নেওয়া পর্যন্ত, এমনকি তার শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ শরীর থেকে আলাদা করা পর্যন্ত সচেতন অবস্থায় সেই তীব্র যন্ত্রণা অনুভব করতে থাকে। এবার আপনারাই ভাবুন কোন পদ্ধতিটা তুলনামূলক মানবিক!
এবার দেখা যাক আমাদের স্বাস্থ্যের উপরে হালাল এবং ঝটকা মাংসের প্রতিক্রিয়া কি। বিভিন্ন গবেষকরা বারবার প্রমাণ করেছেন যে হালাল পদ্ধতিতে প্রাণীবধের সময় প্রাণীগুলি ভীষণ বেদনা বা স্নায়ুমণ্ডলীর ধকল (stress) অনুভব করে। গরু-ষাঁড়, ছাগল ইত্যাদি প্রাণীর ক্ষেত্রে এর ফলে তিনটি ষ্ট্রেস হরমোন (stress hormones), যথা কর্টিসোল (cortisol), নর-এড্রিনালিন (nor-adrenaline) এবং ডোপামাইন (dopamine) ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। কারণটি খুবই সরল,  এই তিনটি হরমোন সমেত আমাদের বেশির ভাগ হরমোনের নিঃসরণই মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস অঞ্চলের  দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। আমেরিকান বৈজ্ঞানিক টেম্পল গ্র্যাণ্ডিন দেখিয়েছেন  যে প্রাণীদের সংজ্ঞাহীন করে (stunning) হত্যা না করলে রক্তে কর্টিসোলের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং তাতে মাংসপেশীর তাপমাত্রাও বাড়ে। সাধারণত স্নায়বিক ধকলের কারণে এড্রিনালিন হরমোনের পরিমিত ক্ষরণে মাংসপেশীর গ্লাইকোজেন ল্যাকটিক অ্যাসিডে পরিণত হয়। ফলে মাংসের পিএইচ কমে (অর্থাৎ  মাংস অ্যাসিডিক হয়)। তার ফলে মাংস যে কেবল গোলাপী এবং নরম থাকে তাই নয়, উপরন্তু মাংসে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি পায় না। অপরপক্ষে প্রাণীটিকে যন্ত্রণাদায়ক পদ্ধতিতে হত্যা করলে স্নায়ুর ধকল বাড়ে। ফলে এড্রিনালিন হরমোনের অতিরিক্ত ক্ষরণে মাংসপেশীর গ্লাইকোজেন খুব তাড়াতাড়ি নিঃশেষিত হয়। ফলে মাংস যথন রান্না করা হয় ততক্ষণে তাতে আর ল্যাকটিক অ্যাসিড অবশিষ্ট থাকে না। ফলে মাংসের পিএইচ বাড়ে এবং ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়ার প্রচুর পরিমাণে বেড়ে যায়। অর্থাৎ, হালাল মাংস স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক হয়ে ওঠে।
সব থেকে বড় কথা, এই হালাল হলো মুসলমানদের জন্য শরিয়া অনুমোদিত ব্যবস্থা। এই শরিয়া ব্যবস্থা আমাদের মত অমুসলমানদের জন্য নয়। তাহলে আমরা আংশিক হলেও এই রিগ্রেসিভ, অবৈজ্ঞানিক এবং অমানবিক ইসলামিক শরিয়া আইন নিজেদের উপরে চাপিয়ে নিচ্ছি কেন? আমরা কি এতটাই অসহায় এবং অযোগ্য যে ইসলামের এই সাম্রাজ্যবাদী কৌশলের সামনে আজ আমাদের নতজানু হয়ে আত্মসমর্পণ করতে হবে? আমাদেরও তো একশ কোটির বাজার আছে! প্রয়োজনে আমরাও কি বিকল্প একটা সনাতনী স্টান্ডার্ডের কথা ভাবতে পারি না?
যাইহোক, সব দিক থেকে বিচার করলে এই হালাল ব্যবস্থা অত্যন্ত অবৈজ্ঞানিক, অমানবিক, ইসলামের অর্থনৈতিক সাম্রাজ্যবাদের নামান্তর। সর্বোপরি আমাদের এই পদ্ধতির মাধ্যমে আংশিকভাবে ইসলামিক শরিয়া আইন পালনে বাধ্য করা হচ্ছে, যা অত্যন্ত অপমানজনক। তাই আসুন আমরা আপাতত সংকল্প করি আর হালাল নয়, আর অবৈজ্ঞানিক এবং অমানবিক রিগ্রেসিভ ভাবধারার দাসত্ব নয়। আসুন আজ থেকেই সবাই হালাল বর্জন করি।