Sunday, October 6, 2019

দরকার সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি

আমাদের কোনও কিছুকে আংশিক ভাবে দেখার পরিবর্তে সামগ্রিক দৃষ্টিতে দেখার মানসিকতা তৈরি করতে হবে। ব্যক্তি হোক, বস্তু হোক, ঘটনা হোক অথবা পরিস্থিতি হোক অথবা মতাদর্শ হোক; সার্বিকভাবে তার প্রভাব (impact), পরিনাম (consequences) অথবা উপযোগিতা (utility) বিচার করে তার গ্রহণযোগ্যতা নির্ধারিত হ‌ওয়া দরকার।

মনে করুন একটা পিল, যাতে একটু পটাশিয়াম সায়ানাইড যার উপরে সুগার কোটিং দেওয়া আছে। কেউ বলবে ওটা মিষ্টি, কেউ বলবে ওটা বিষ। দুটোই সত্য। বক্তব্যের সত্যতা নিয়ে বিতর্ক হতেই পারে। কিন্তু ওটা খেলে তার পরিনাম কী হবে সেটা গুরুত্বপূর্ণ। একজন ব্যবহারিক দৃষ্টিভঙ্গি সম্পন্ন মানুষ সার্বিক পরিনামের কথা ভেবেই স্থির করবে ওই পিল খাবে কি খাবে না। যে মরতে চায় সে খাবে, আর যে বেঁচে থাকতে চায় সে খাবে না। কিন্তু যারা বক্তব্যের সত্যাসত্য নিয়ে শুধু লম্বা বিতর্ক‌ই করতে থাকবে, তাদের এই বিতর্কের মূল্য কি? তারা একবার বলবে পিলটা খুব মিষ্টি, আবার পরক্ষণেই বলবে পিলটা খুব বিষাক্ত। দুটোই সত্য হলেও এদের এই বিতর্ক কাউকে পথ দেখাবে না, শুধু বিভ্রান্ত‌ই করতে থাকবে। আপনাকে সার্বিক পরিনতির কথা ভেবেই একটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে আপনি কি করবেন।

একটা মতাদর্শের ক্ষেত্রেও এই একই কথা প্রযোজ্য। কতটা ঠিক, কতটা ভুল সেটা বিচার্য্য নয়। বিচার্য্য বিষয় হল এই মতাদর্শের সার্বিক পরিনাম দেশ ও জাতির উপরে কি হবে।

উদাহরণ হিসেবে বলছি, গান্ধীর আধ্যাত্মিকতায় বিশ্বাস, গোরক্ষায় আগ্রহ, অনারম্বর জীবনযাপন, রামরাজ্যের কল্পনা ইত্যাদি (সেগুলো ভন্ডামি না সত্য সে বিচারে যাচ্ছি না) দেখে আপনি তার প্রশংসা করতেই পারেন। পাশাপাশি ইসলামের বিষয়ে তার চূড়ান্ত সমঝোতার নীতি, অনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ ইত্যাদি দেখে আপনি তার সমালোচনাও করতে পারেন। কিন্তু সার্বিক বিচারে আপনাকে স্থির করতে হবে, গান্ধীর নেতৃত্বে দেশ ও সমাজ নিরাপদ  ছিল কি না। হয়তো গান্ধীর অনেক কিছুই অনেকের দৃষ্টিতে প্রশংসনীয় থাকতে পারে। কিন্তু আজ প্রমাণিত যে টোটাল 'গান্ধী প্যাকেজ' দেশের এবং হিন্দুদের যে সর্বনাশ করেছে তা অপূরণীয়। 

আজও অনেকেই অনেক ন্যারেটিভ সামনে আনছেন বা এনেছেন। তার কতটা গ্রহণযোগ্য, কতটা নয় - এর পারসেন্টেজের হিসাব করে সেই ন্যারেটিভকে অনুসরণ করার পরিবর্তে দেশ ও জাতির ভবিষ্যত নির্মাণে এদের টোটাল প্যাকেজের (ন্যারেটিভ, কার্যপদ্ধতি, নেতৃত্ব, কমিটমেন্ট ইত্যাদি) সার্বিক প্রভাব ও উপযোগিতা কতটা, সেটা ভেবেই সেই প্যাকেজের মূল্যায়ন করা উচিত। মূল্যায়ন করুন, সিদ্ধান্ত নিন, নিজেকে নিয়োজিত করুন। এদিক ওদিক হাতড়ে বেরিয়ে সময় নষ্ট করবেন না। সময় আমাদের হাতে খুবই কম।

No comments:

Post a Comment