আজকের দিন, ২২শে নভেম্বর। সালটা ২০০৭। কলকাতার বুকে লুঙ্গি-টুপির তাণ্ডব চলছে। তসলিমাকে তাড়াতে হবে এই রাজ্য থেকে। কেন? উনি একটা বই লিখেছেন। নাম 'লজ্জা'। সেই বইয়ে বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতনের একটা চিত্র তুলে ধরেছেন সাহসী তসলিমা। বাংলাদেশে প্রাণ সংশয়। তাই আশ্রয় নিয়েছেন প্রোগ্রেসিভ, লিবেরাল বাঙালির বাসস্থান এই কলকাতায়। হ্যাঁ, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, অপর্ণা সেন, কবি সৃজাত, শীর্ষেন্দু, গরুখেকো সুবোধ-বিকাশ কবীর সুমনদের কলকাতায়।
লুঙ্গি-টুপির তাণ্ডব চলছে তসলিমাকে তাড়াতে হবে। দুদিন ধরে বিনা বাধায়। নেতৃত্বে জনপ্রতিনিধি ইদ্রিস আলী। না, এর প্রতিবাদে একটাও মিছিল, যার সামনের সারিতে অপর্ণা সেন, সুবোধ বিকাশ - এই কলকাতার বুকে হয় নি। একটাও কবিতা সৃজাতদের কলম থেকে বেরোয় নি। দুদিন ধরে চলল এই তাণ্ডব। অবশেষে সকলের অসহায় আত্মসমর্পণ মুসলিম মৌলবাদের সামনে। তাড়ানো হল তসলিমাকে।
বুদ্ধিজীবীদের এই নীরবতা কি কলকাতার বাঙালির লজ্জা নয়? মরীচঝাঁপির ক্ষেত্রে আনকম্প্রোমাইজিং অবস্থান নেওয়া প্রবল প্রতাপশালী লাল সরকারের মুসলিম মৌলবাদীদের সামনে এই অসহায় আত্মসমর্পণ কি বামপন্থীদের লজ্জা নয়?
না, এগুলো ওদের লজ্জিত করে না। কারণ এই পক্ষপাতমূলক আচরণটাই ওদের নীতি। কারণ এরা ওদের পক্ষে। মুক্তচিন্তা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা - এইসব তত্ত্বের অবতারণা তখনই হবে যখন আপনি এই মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবেন। এই সব তত্ত্ব বামৈস্লামিক দুষ্কৃতীদের প্রতিক্রিয়ার হাত থেকে বাঁচানোর জন্য অন্যতম অস্ত্র। এই সবই আপনাকে আমাকে থামানোর জন্য।
এটা আসলে আমাদেরই লজ্জা। কারণ আমরা এই বামৈস্লামিক ষড়যন্ত্রের হাত থেকে তসলিমাকে বাঁচাতে পারিনি। কারণ আমরা আজও এই ভারতবিরোধী, হিন্দুবিরোধী বামৈস্লামিক শক্তিকে ভারতের মাটি থেকে শিকড়সমেত উপড়ে ফেলতে পারিনি। তাই যতদিন বামৈস্লামিক দুষ্কৃতীদের শিকার তসলিমাদের নিরাপত্তা দিতে না পারবেন, এদের ধ্বংস করে প্রকৃত মুক্তচিন্তার প্রতিষ্ঠা না করতে পারবেন, আসুন লজ্জিত হই। মেরুদণ্ডহীনতায় লজ্জিত হওয়ায় লজ্জা কিসের?
No comments:
Post a Comment