আসামে এনআরসি-র চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত হতে চলেছে ৩১শে আগষ্ট। এই তালিকা অনুযায়ী যাঁঁরা বিদেশী বলে ঘোষিত হবেন, সরকার তাঁঁদের আশ্বস্ত করেছে যে তাঁঁরা ট্রাইব্যুনালে আবেদন করে নিজেদের নাগরিকত্ব প্রমাণ করার সুযোগ পাবেন। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে আগত শরণার্থী বাঙালি হিন্দুদের, যাঁঁরা ৭১এর পরে ভারতে এসেছেন, তাঁঁদের জন্য কি ধরণের সুরক্ষা কবচ থাকছে সে সম্পর্কে আমার এখনও কোনও স্পষ্ট ধারণা নেই। কারণ নাগরিকত্ব আইন এখনও প্রণয়ন করা সম্ভব হয় নি, আর আগের টার্মে মোদি সরকার যে নোটিফিকেশন জারি করে সাময়িক ভাবে উদ্বাস্তু হিন্দু বাঙালিদের একটা সুরক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিল, সেটাও এখন বলবৎ আছে কি না জানি না। অবশ্য এই নোটিফিকেশন আসামে কতটা কার্যকরী ছিল, সেটাও একটা বড় জিজ্ঞাসা। তাই শেষ পর্যন্ত কী দাঁড়াবে সেটা এখন কেউ সঠিকভাবে বলতে পারবে বলে মনে হয় না। তবে ৩৭০ ধারা বিলোপকারী এই কেন্দ্রীয় সরকারের যে একটা সদিচ্ছা আছে এ ব্যাপারে কোনও সন্দেহের অবকাশ নেই। বস্তুতঃ একমাত্র এই সদিচ্ছাই এখন আসামের বাঙালি হিন্দুর সব থেকে বড় ভরসা। এখন মোদি-শাহ্ যদি সর্বোচ্চ আদালতের কোর্টে বল ঠেলে দেন, সেটা হবে বাঙালি হিন্দুর ইতিহাসে সবথেকে বড় বিশ্বাসঘাতকতা।
আসামের উদ্বাস্তু বাঙালি হিন্দুর কি হতে চলেছে সেটা সময় বলবে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গেও তো এনআরসি হওয়া দরকার। আমরা প্রথম থেকেই বলে এসেছি জাতীয় স্বার্থে এনআরসি চাই। ভারতবর্ষ সরাইখানা নয়। রাজ্য থেকে অবৈধ মুসলিম অনুপ্রবেশকারীদের তাড়াতে হবেই। পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্যার ভারসাম্য নষ্ট হয়ে গেছে এই অবৈধ অনুপ্রবেশের ফলে। ১৯৪৭ এর ২০শে জুন প্রস্তাবিত পাকিস্তানের বুক চিরে এই পশ্চিমবঙ্গের জন্মই হয়েছিল বাঙালি হিন্দুর হোমল্যান্ড হিসেবে। কিন্তু আমরা দেখছি দেশভাগের পর থেকে আজ পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে অত্যাচারিত উদ্বাস্তু হিন্দু জনস্রোতকে টেক্কা দিয়ে লাগাতার অবৈধ মুসলিম অনুপ্রবেশ ঘটে চলেছে আমাদের রাজ্যে। পশ্চিমবঙ্গের তিনটি জেলায় ইতিমধ্যেই বাঙালি হিন্দুরা সংখ্যালঘু হয়ে পড়েছে। একই চিত্র বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন বেশিরভাগ ব্লকে। এই পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি চরিত্র বজায় রাখতে হলে অবিলম্বে এনআরসি শুরু করা আবশ্যক। কিন্তু আমরা ঘর পোড়া গরু। আসামে উদ্বাস্তু বাঙালি হিন্দুরা যে অনিশ্চয়তার সামনে পড়েছে, আমাদের রাজ্যে যাতে তা না হয়, তারজন্য ভাবত হবে বৈকি! তাই আমরা মনে করি বাংলাদেশ থেকে যে অত্যাচারিত বাঙালি হিন্দুরা শরণার্থী হিসেবে এই পশ্চিমবঙ্গে আসতে বাধ্য হয়েছে, তাদের ভারতের নাগরিকত্ব দেওয়ার বিষয়টাকে প্রাথমিকতা দিতে হবে।
আমাদের স্পষ্ট দাবি - প্রথমে পশ্চিমবঙ্গে আগত শরণার্থী বাঙালি হিন্দুদের নাগরিকত্ব সুনিশ্চিত করতে হবে। তারপরে এনআরসি শুরু করতে হবে। তা না হলে বাঙালি হিন্দুরা ব্যাপক অনিশ্চয়তার মুখে পড়বে। বাঙালি হিন্দুদের নাগরিকত্বের নিশ্চয়তা শুধুমাত্র মৌখিকভাবে দিলে হবে না। আগে নাগরিকত্ব আইন পাশ করাতে হবে, তারপরে এনআরসি। নাগরিকত্ব আইন প্রণয়ন না করে পশ্চিমবঙ্গে এনআরসি চালু করার চেষ্টা করলে হিন্দু সংহতি তার তীব্র বিরোধিতা করবে।
No comments:
Post a Comment