Sunday, September 8, 2019

এন‌আরসি - র ভিত্তিবর্ষ

এন‌আরসি - র ভিত্তিবর্ষ? ওটা পূর্ব পাকিস্তান থেকে ভারতে আসা মুসলমানদের জন্য প্রযোজ্য হোক। বাস্তবে দেশভাগের পরে ওদের ভারতে এসে বসবাস করার কোনও নৈতিক অধিকার‌ই নেই। তাই ১৯৪৭ এর ১৪ই আগষ্টের পরে পূর্ব পাকিস্তান থেকে ভারতে আসা প্রত্যেক মুসলমান অবৈধ অনুপ্রবেশকারী। ভুলে গেলে চলবে না অখণ্ড বঙ্গের ৯৩% মুসলমান পাকিস্তানের পক্ষে মুসলিম লীগকে ভোট দিয়েছিল। বস্তুত এদের ভারতে লালন পালন করা মানে পাকিস্তানী কালসাপদের দুধকলা দিয়ে পোষা। এরা যেকোনো সময় ছোবল মারবেই মারবে। সুতরাং ভারতের শত্রুদের ভারতের নাগরিকত্ব দেওয়া যাবে না।

পাশাপাশি, হিন্দুদের জন্য কিসের ভিত্তিবর্ষ? হিন্দুরা দেশভাগের আগে থেকে আজ পর্যন্ত ধর্মীয় আগ্রাসনের শিকার। ভবিষ্যতেও হতেই থাকবে। তাই পৃথিবীর যেকোনও প্রান্তে বসবাসকারী হিন্দু যেকোনো সময়ে ভারতে এসে নাগরিকত্ব চাইলে তাকে স্বাগত জানাতে হবে। বাঙালি হিন্দুর হোমল্যান্ড এই পশ্চিমবঙ্গ। পশ্চিমবঙ্গ জন্ম নিয়েছিল এই উদ্দেশ্যেই। তাই বাঙালি হিন্দুদের জন্য কোনও ভিত্তিবর্ষ করাটা‌ই অযৌক্তিক। এদের অবিলম্বে এবং নিঃশর্তভাবে নাগরিকত্ব দিতে হবে।

এক্ষেত্রে প্রধান সমস্যাগুলো কি? সবথেকে বড় সমস্যা হল বাঙালি হিন্দুর মানসিকতা। যারা অত্যাচারিত হয়ে ওপার থেকে আসবেন, তারা ওপারে তাদের উপরে হ‌ওয়া অত্যাচারের কথা এপারে এসে কিছুতেই স্বীকার করবেন না! বরং কিছু লোক সুজন চক্রবর্তীদের ধামাধরে থাকবেন। নিজেদের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে এপারের মানুষকে ইসলামী আগ্রাসনের ব্যাপারে সচেতন করার পরিবর্তে তাদের ধর্মনিরপেক্ষতার পাঠ দেবেন। অনেকে আবার দলিত-মুসলিম ঐক্যের কথা বলে নিজেদের আখের গুছাতে ব্যস্ত থাকবেন। এটা মেনে নেওয়া যায় না। আপনাদের যেমন অধিকার আছে, একটা দায়িত্ব‌ও তো আছে! এটাতো সত্য যে আপনারা এপারে এসে এপারের জমি, খাদ্য এবং কর্মসংস্থানের উপরে ভাগ বসাচ্ছেন। এটাযে একটা চাপ তা তো অস্বীকার করার উপায় নেই। যেভাবে আসামের অহমীয়ারা প্রতিক্রিয়া করেছে বা করছে, সেভাবে এপারের বাঙালি হিন্দুরা এখনও পর্যন্ত এর বিরোধিতা না করলেও একটা চাপা অসন্তোষ যে আছে, এবং সেটা স্বাভাবিক তা অস্বীকার করা যায় না। 

এর সমাধান কি? সোজা কথায় অবৈধ মুসলিম অনুপ্রবেশকারীদের দখল করা জমি, খাদ্য ও কর্মসংস্থানের জায়গা ছিনিয়ে নিয়ে সেখানে নব্য নাগরিকদের পুনর্বাসন হবে। তাই এন‌আরসি চাই। সঠিকভাবে এবং কঠোরভাবে চাই। পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে বিতাড়িত হিন্দু বাঙালিদের সংখ্যার সমানুপাতে বাংলাদেশ থেকে জমি আদায় করতে হবে।

এই লড়াইয়ের পুরোভাগে নব্য নাগরিকদের‌ই থাকতে হবে এবং সম্পূর্ণ বাঙালি জাতিকে এই আন্দোলনে যোগদান করতে হবে। এভাবেই নবকলেবরে জেগে উঠবে বাঙালি জাতি এবং সার্থক হবে পশ্চিমবঙ্গের জন্মের উদ্দেশ্য। আমার বিশ্বাস, এতে পারস্পরিক আস্থা ও সম্মানের জায়গাটা অত্যন্ত সুদৃঢ় হবে, যা একটা শক্তিশালী জাতি হিসেবে মাথা তুলে দাঁড়ানোর জন্য খুবই প্রয়োজন।

অনেকে আসামের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে পশ্চিমবঙ্গে এন‌আরসি - র বিরোধিতা করছেন। তাদের অবৈধ মুসলিম অনুপ্রবেশকারীদে স্টটলেস করার প্রয়োজনীয়তার কথাটা চিন্তা করা দরকার। এরা থেকে গেলে এন‌আরসি আটকে আপনারা যাদের বাঁচাতে চাইছেন, তারাও বাঁচবে না। বাংলাদেশে এন‌আরসি হয় নি, তথাপি হিন্দুরা উদ্বাস্তু হয়েছে। ডোমোগ্রাফিটা একবার পাল্টে গেলে এক‌ইভাবে আমরাও উদ্বাস্তু হবো। তাই গঠনমূলক দৃষ্টিতে এন‌আরসি কে দেখুন। পশ্চিমবঙ্গে এন‌আরসি হতেই হবে, কিন্তু সেটা যাতে আমাদের শর্তেই হয় তারজন্য রাস্তায় নামতেই হবে।

No comments:

Post a Comment