Sunday, March 15, 2015

এই ভন্ডামির শেষ কোথায়?

যদা যদা হি ধর্মস্য গ্লানির্ভবতি ভারতঃ
অভ্যুত্থানমধর্মস্য তদাত্মানম্ সৃজাম্যহম্৷
পরিত্রাণায় সাধুনাং বিনাশায়চ দুষ্কৃতাং
ধর্মসংস্থাপনার্থায় সম্ভবামি যুগে যুগে৷৷

যখন যখন ধর্ম পালন গ্লানির বিষয় হয়ে দাঁড়াবে এবং অধর্মের অভ্যুত্থান ঘটবে তখন তখন সাধুদের পরিত্রাণ এবং দুষ্কৃতিদের বিনাশ করতে স্বয়ং ভগবান আবির্ভূত হবেন৷ কথাটিতে বিশ্বাস করলেও এর মর্মার্থ উপলব্ধি করার চেষ্টা খুব কম লোকই করেন৷ বেশীর ভাগ কৃষ্ণভক্তের বিশ্বাস ভগবান আসবেন, দুষ্কৃতিদের শাস্তি দেবেন আর স্বর্গে পাড়ি দেবেন৷ আর আমরা খোল-করতাল বাজিয়ে তারস্বরে সঙ্কীর্ত্তন করে ভগবানের ভজনা করবো৷ কাজ শেষ করে চলে যাওয়ার পর ভগবানের দুষ্টদমনের লীলাটা বেবাক্ ভুলে যাবো৷ তবে রাসলীলাটা ভুলে গেলে চলবে না৷ ভগবানের জীবনের ওই অংশটা বাদ দিয়ে আর কিছুই তো গ্রহণ করার যোগ্যতা বা প্রবৃত্তি, কোনটাই আমাদের নেই৷

সমাজে যখন মূল্যবোধের পরিবর্তন হয়, সততা, ন্যায়, পরার্থপরতা প্রভৃতি গুণগুলির অবমূল্যায়ন করা হয় তখনই উপরোক্ত গুণসম্পন্ন ধার্মিক ব্যক্তিদের মান-মর্যাদা থাকে না৷ ধর্মপালন গ্লানির বিষয় হয়ে দাঁড়ায়৷ পাশাপাশি ব্যক্তিস্বার্থ, অন্যায়, মিথ্যা - এইগুলি হয়ে দাঁড়ায় জীবনযাত্রা নির্বাহের মূল সাধন, তখনই অধর্মের অভ্যুত্থান ঘটে৷ আজ আমাদের সমাজে ধার্মিক ব্যক্তিরা বোকা এবং বাস্তববোধহীন বলে গণ্য হচ্ছেন৷ আর অসৎ পথে, অন্যকে শোষণ করে যারা সম্পন্ন হয়ে উঠেছেন তারাই আজ আইকন৷ আজ সম্মান ও মর্যাদার এই মাপকাঠিটা কিন্তু আমরাই স্থাপন করেছি৷ তাই আমাদেরকে অধর্মের পৃষ্ঠপোষক বললে কি কোন ভুল হবে? তাই আজকে যদি সেই মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে ভগবান স্বয়ং আবির্ভূত হন, তাহলে তাঁর রোষানলের শিকার আমরা ছাড়া আর কে হবে?

 তাছাড়া ভগবান তো সর্বশক্তিমান৷ এই সমগ্র সৃষ্টির নিয়ন্ত্রক তিনি৷ তাহলে তাঁর প্রতিশ্রুতি রক্ষা করার জন্য তাঁকে মানুষরূপে মর্ত্যলোকে অবতীর্ণ হতে হবে কেন? পন্ডিতরা বলবেন লোকশিক্ষার জন্য৷ শিক্ষাটা কি? মানুষের সমস্যার সমাধান মানুষকেই করতে হবে বলে তাঁর বিধান৷ তিনি স্বয়ং এই বিধানের অমর্যাদা করতে চান না বলেই তিনি মানুষরূপে জন্ম নিয়ে কর্তব্য পালন করেন৷ অর্থাৎ ধর্মের রক্ষা আর অধর্মের বিনাশের দায়িত্ব মানুষেরই অর্থাৎ আমাদেরই৷ তাই আমরা শ্রী রামচন্দ্রকে দেখেছি বনবাসী-গিরিবাসীদের সঙ্গে নিয়ে রাবণবধ করতে৷ মহাভারতের যুদ্ধে শ্রীকৃষ্ণকে দেখেছি অস্ত্রধারণ না করার শপথ নিতে৷ আর আমরা একদিকে অধর্মের পথে চলছি, অধর্মকে সংরক্ষণ করছি, অধর্মকে নীরবে সহ্য করছি৷ অপরদিকে আমাদের থেকে শক্তিশালী দুষ্কৃতিদের হাত থেকে পরিত্রাণের আশায় ভগবানের শরণাপন্ন হচ্ছি৷ এই ভন্ডামির শেষ কোথায় তা সম্ভবতঃ স্বয়ং ভগবানও বলতে পারবেন না৷

No comments:

Post a Comment