Wednesday, March 4, 2015

চাই প্রতিক্রিয়াশীল হিন্দুত্ব

হিন্দু সমাজের সংবেদনশীলতা আজ তলানিতে ঠেকেছে। প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ – দুই ভাবেই যথেচ্ছ আক্রমণ চলছে হিন্দুর উপর, অথচ হিন্দু নির্বিকার, কোন প্রতিক্রিয়া চোখে পড়ছে না, বিশেষতঃ আমাদের এই বাংলায়। একদিকে চলছে বাম বুদ্ধিজীবিদের তাত্ত্বিক আক্রমণ। অপরদিকে চলছে হিন্দুর উপর প্রত্যক্ষ আক্রমণ। আমরা চোখে দেখেও দেখছি না। কানে শুনেও শুনছি না। ধর্মনিরপেক্ষতার পর্দা আমাদের চোখ ও কান – দুটোকেই বন্ধ করে দিয়েছে। তথাকথিত বুদ্ধিজীবিদের কলম এবং মুখের দাপটে আমাদের সর্বজনীন, উদার হিন্দু মূল্যবোধ গুলি আজ আমাদের প্রগতিশীল বাঙালির কাছে সংকীর্ণতা এবং ধর্মান্ধতা হিসাবে পরিগণিত হচ্ছে। হিন্দু পরিচয় আজ আমাদের কাছে গৌরবের বিষয় নয়। এই স্রোতে গা ভাসানোর প্রবণতা ভাইরাসের মত ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র। সাধু – সন্ন্যাসীরাও ব্যতিক্রম নন। সারা বিশ্বে হিন্দুত্বের পতাকা উড্ডীন করেছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ। চিকাগো ভাষণের ছত্রে ছত্রে হিন্দুত্বের বিশ্বজনীনতার কথা তুলে ধরেছিলেন তিনি এবং স্পষ্ট ভাষায় বলেছিলেন যে, এই হিন্দুধর্মের প্রতিনিধি হিসেবে তিনি গর্ব অনুভব করেন। অথচ তাঁর ধ্বজাধারী রামকৃষ্ণ মিশনের কর্ণধাররা আজ নিজেদের হিন্দু পরিচয় অস্বীকার করতে তৎপর, এমনকি খোদ স্বামীজিকেই তারা এই তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষতার মোড়কে মুড়ে আমাদের সামনে তুলে ধরতে বদ্ধপরিকর।
হিন্দু মানেই সে প্রকৃত ধর্মনিরপেক্ষ – এই সহজ সরল সত্যটা কেউ অস্বীকার করতে পারে কি? অন্য ধর্মীদের হাতে এত অন্যায়, এত অত্যাচার সহ্য করার পরেও ভারতবর্ষ যে আজও ধর্মনিরপেক্ষ, সংখ্যালঘুরা সারা পৃথিবীর তুলনায় এদেশে বেশি সুরক্ষিত – তার কারণ এদেশের সংবিধান বা সরকার তাদের সুরক্ষা দিচ্ছে বলে নয়। তার একমাত্র কারণ এই যে  ভারতবর্ষ এখনও হিন্দুপ্রধান। এদেশে প্রকৃত ধর্মনিরপেক্ষতার গ্যারান্টি কোনও রাজনৈতিক দল, সরকার বা প্রশাসন নয় – দিতে পারে একমাত্র সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সমাজ। তা না হলে আজ হিন্দুবিহীন কাশ্মীর ধর্মনিরপেক্ষ নয় কেন? কেন ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পরে পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ ধর্মনিরপেক্ষ নয়? শুধু কাশ্মীর কেন, যেখানে যেখানে হিন্দু সংখ্যালঘু হয়ে গেছে, সেই সেই অংশে ধর্মনিরপেক্ষতা হয়েছে পদদলিত। তার সাথে সাথে সেখানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে জেহাদী সন্ত্রাসবাদ, বিচ্ছিন্নতাবাদ। এই কঠোর সত্য স্বীকার করার সময় কি এখনও আসেনি? অথচ এই হিন্দুকেই ধর্মনিরপেক্ষতার পাঠ পড়ানো হচ্ছে। এই মেকি ধর্মনিরপেক্ষতার মাদকে আচ্ছন্ন করে হিন্দু সমাজকে হীনবল করে দেওয়া হচ্ছে। প্রতিটি ক্ষেত্রে হিন্দুকে তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দায়িত্বের বোঝা একা তার কাঁধে চাপিয়ে দিয়ে । হিন্দুর স্বার্থ রক্ষার জন্য আওয়াজ উঠলেই সাম্প্রদায়িকতার তকমা এঁটে তাকে দমন করা হচ্ছে কঠোর ভাবে।
পাশাপাশি হিন্দুর উপর চলছে প্রত্যক্ষ আক্রমণ। নিঃশব্দে চলছে জনসংখ্যা বৃদ্ধি। ফুরফুরা শরীফের পীরজাদা ত্বহা সিদ্দিকির মতে আজ পশ্চিমবঙ্গে মুসলমান জনসংখ্যা এরাজ্যের মোট জনসংখ্যার ৪১% এরও বেশি। পশ্চিমবঙ্গে হিন্দুর সংখ্যালঘু হতে আর কত সময় লাগবে? সেদিন আর দূরে নয় যেদিন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদে কোন বন্দ্যোপাধ্যায়-চট্টোপাধ্যায় থাকবে না, থাকবে শুধু মোল্লা বা ইসলাম পদবিধারী ব্যক্তিরা। সেদিন এই ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা শান্তি ও সুরক্ষার সাথে এখানে বসবাস করতে পারবেন তো? একদিন বাংলাদেশ থেকে পাততাড়ি গুটিয়ে যেভাবে পালিয়ে আসতে হয়েছিল, ঠিক সেভাবে এই বাংলা ছেড়ে পালাতে হবে না তো? দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া, নদীয়া, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ, মালদা, উত্তর দিনাজপুর সহ বাংলার যে যে জেলায় হিন্দুর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য ভাবে কমে গেছে, সেখানে রাজনৈতিক সংঘর্ষ, ডাকাতি ইত্যাদি বিভিন্ন অছিলায় হিন্দুর উপর চলছে অবর্ণনীয় অত্যাচার। জমি দখল, ঘরবাড়ি লুঠ, পুড়িয়ে দেওয়া, ফসল ও মাছের ভেড়ি লুঠ থেকে শুরু করে হিন্দু নারীধর্ষণ, হত্যা ও অপহরণ – সব কিছুই চলছে অবাধে। এসবের আসল উদ্দেশ্য গ্রামের পর গ্রাম হিন্দুবিহীন করে দেওয়া। এখনই সচেতন না হলে কি আবার দেশভাগ, আবার উদ্বাস্তু হওয়া, আবার নারকীয় হত্যালীলা, মা বোনের সম্ভ্রমহানি আটকানো যাবে?
বাংলার জন-চরিত্রের পরিবর্তনের সাথে সাথে বদলাচ্ছে এরাজ্যের চালচিত্র। ক্ষুদিরাম, বাঘ যতীন, বিনয়-বাদল-দীনেশের বিপ্লবী বাংলা এখন জেহাদী সন্ত্রাসবাদের আঁতুর ঘর – রশিদ খান, আফতাব আনসারি, ইয়াসিন ভাটকালদের লীলাক্ষেত্র। এন.আই.এ এবং আই.বি-র বক্তব্য অনুসারে বাংলাদেশ থেকে তাড়া খাওয়া বেশ কিছু সন্ত্রাসবাদী পশ্চিমবঙ্গে আশ্রয় নিয়েছে। এই সন্ত্রাসবাদীদের পিছনে মদত আছে এরাজ্যের সরকারী পার্টির কয়েকজন নেতার। এই সমস্ত নেতারা আবার লোকসভা এবং রাজ্যসভার এম.পি।তবুও বাংলার হিন্দু নির্বিকার।আমাদের এই উদাসীনতার মুল্য দিতে হবে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে। আর সেই মুল্য হবে ভয়ংকর। আমাদের পূর্বপুরুষদের উদাসীনতার মূল্য দিয়েছি আমরা। তবুও ওপার থেকে অপমানজনকভাবে বিতাড়িত হয়ে এসে এই বাংলায় আমাদের ঠাঁই হয়েছিল। কাশ্মীরের হিন্দুর মত এই বাংলা থেকে বিতাড়িত হয়ে আমাদের ছেলে মেয়েরা কোথায় যাবে? তাদের ভবিষ্যৎ কী হবে? তারা কি আমাদের কাছে জবাব চাইবে না? তাই সময় থাকতে সচেতন হতে হবে, সংবেদনশীল হতে হবে। পৃথিবীর যে কোন প্রান্তে কোন একজন হিন্দুর উপর অত্যাচার হলে প্রত্যেকটি হিন্দু যেদিন ক্রোধে পাগল হয়ে উঠবে এবং প্রতিকার না হওয়া পর্যন্ত শান্ত হবে না – সেদিন থেকে হিন্দুর ভাগ্যের চাকা ঘুরতে শুরু করবে। এই রকম সংবেদনশীল এবং প্রতিক্রিয়াশীল হিন্দুত্বই হিন্দু সমাজকে রক্ষা করতে পারবে, আমাদের দেশ এই সুজলা-সুফলা-শস্যশ্যামলা ভারতবর্ষকে রক্ষা করতে সক্ষম হবে। নান্যঃ পন্থা বিদ্যতে অয়নায়।

No comments:

Post a Comment