Wednesday, March 4, 2015

ভারত জগাখিচুড়ি মার্কা রাষ্ট্র নয়, বিশুদ্ধ হিন্দুরাষ্ট্র

ভারতবর্ষ হিন্দুরাষ্ট্র। এদেশে ইংরেজ শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরেও এবিষয়ে কারও মনে কোন সন্দেহ ছিল না। স্বামী বিবেকানন্দ বিশ্ববাসীর সামনে ভারতের পরিচয় তুলে ধরতে ‘ভারতীয়’ এবং ‘হিন্দু’ এই দু’টি শব্দকে সমার্থক শব্দ হিসাবেই বারবার তুলে ধরেছেন। ঋষি অরবিন্দ, বঙ্কিমচন্দ্র, রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র প্রমুখ মনীষীরাও ভারতীয় জাতীয়তা বলতে হিন্দু জাতীয়তার কথাই বলেছেন। এবিষয়ে তাদের বক্তব্যগুলি পড়লে স্পষ্ট বোঝা যায় যে এই ধারণাটাই DEb1তৎকালীন প্রচলিত ধারণা। হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের ভিত্তিতে গঠিত জগাখিচুড়ি মার্কা মিশ্র জাতীয়তার কোন ধারণা সে সময় গড়ে ওঠেনি।
পরবর্তীকালে স্বাধীনতার লড়াই থেকে দূরে সরে থাকা মুসলিম সমাজকে কাছে টানার জন্য একতরফা হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের গান গাইতে শুরু করলেন তৎকালীন দেশনেতারা। তাঁরা এই লক্ষ্যে এতদূর এগিয়ে গেলেন যে ‘ভারতবর্ষ’ এবং ‘ভারতীয়’ এই দুটি মূলগত অবধারণার বিষয়েই তাঁরা আপোষ করতে শুরু করলেন। স্বাধীনতার লড়াইয়ে তাঁদের আন্তরিকতার অভাব ছিল তা আমি বলবনা। কিন্তু ইংরেজদের তাড়িয়ে তাঁরা যে বস্তুটি হাতে পেতে চাইছিলেন, সেই মহামূল্যবান বস্তুটিকেই তাঁরা বিকৃত করে ফেললেন। ভারতবর্ষের প্রাচীনকাল থেকে চলে আসা রাষ্ট্ররূপ অস্তিত্বকেই অস্বীকার করে বলা হল ‘India, a nation in making’- অর্থাৎ ইন্ডিয়া নামের একটি নতুন রাষ্ট্র গঠিত হওয়ার পথে। আরও হাস্যকরভাবে গান্ধীজীকে জাতির জনক বলা হল। মুসলমানদের খুশি করে পাশে পাওয়ার আশায় আমাদের দেশবরেণ্য নেতারা আসমুদ্রহিমাচল বিস্তৃত আমাদের পূর্বপুরুষ, আমাদের প্রাচীন পরম্পরা, আমাদের ইতিহাস, আমাদের মহাপুরুষদের সঙ্গে আমাদের যে গভীর সম্পর্ক, তা ছিন্ন করে দিলেন। এক সভ্য, সুসংস্কৃত, বিশ্ববরেণ্য প্রাচীন রাষ্ট্রের অংশ হিসেবে আমাদের স্বাভিমানবোধ নষ্ট করে দিলেন।
সেই সময় থেকে আজ পর্যন্ত লাগাতার এই প্রচারের পরিণাম হল এই যে আমরা মুসলমানদের কাছে টানতে তো পারলামই না, বরং মুসলমানরা আমাদের দেশের একটা অংশ ভেঙ্গে নিয়ে আলাদা পাকিস্তান গঠন করলো, যা শুরু থেকেই ভারতের শত্রুরাষ্ট্রে পরিনত হল। অথচ আজও আমরা হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের মালা জপ করে চলেছি। আজও আমরা সেই মিশ্র জাতীয়তার মোহমন্ত্রে আচ্ছন্ন। আজও হিন্দুরাষ্ট্রের কথা বললে হিন্দুরাই রে রে করে ওঠেন। আজও আমরা সত্য দর্শন করতে পারছি না। এই সত্য দর্শন করেছিলেন ডঃ বাবাসাহেব আম্বেদকর, করেছিলেন ডঃ হেডগেওয়ার। তাঁরা বিশ্বাস করতেন ভারতে হিন্দু এবং মুসলমান দুটি ভিন্ন জাতি। এই দুটি জাতির ইতিহাসবোধ, জয়-পরাজয়ের অনুভূতি, শত্রু-মিত্র ভাবনা, নায়ক-খলনায়ক ভাবনা পরস্পর বিরোধী। এদের শ্রদ্ধার কেন্দ্র আলাদা, সংস্কৃতিক মূল্যবোধ আলাদা, সর্বোপরি ভারতের মাটির প্রতি এদের দৃষ্টিভঙ্গি সম্পূর্ণ ভিন্ন। অর্থাৎ হিন্দু এবং মুসলিম – দুটি আলাদা জাতি। ভারতবর্ষ হিন্দুর দেশ, হিন্দুরাই ভারতের জাতীয় সমাজ। বাকিরা প্রচলিত আইনের বলে এদেশে নাগরিক হিসাবে বসবাস করলেও তারা কোনদিন এদেশের জাতীয় সত্ত্বারূপে গণ্য হতে পারে না। ভারতে জন্মগ্রহণ করলেও যদি আপনি আপনার পূর্বপুরুষদের অস্বীকার করেন, ভারতের শত্রুকে মিত্ররূপে গ্রহণ করেন, ভারতের পরাজয়ে আনন্দিত হন, বিদেশী আক্রমণকারী ঘোরী-বাবর আপনার চোখে নায়ক হয়ে যায়; পক্ষান্তরে দেশের ধর্ম ও সংস্কৃতিরক্ষায় ব্রতী শিবাজী মহারাজ এবং মহারাণা প্রতাপ হয়ে যায় খলনায়ক, তাহলেও কি আপনাকে ভারতের জাতীয় সমাজের অংশ হিসাবে গন্য করা উচিত? না কি আপনাকে দেশদ্রোহী বলে চিহ্নিত করা উচিত?
প্রাচীন কাল থেকেই ভারতে বহু রাজ্য ও বহু রাজা থাকলেও ভারত রাষ্ট্র হিসাবে এক ছিল। আসমুদ্র হিমাচলের রাষ্ট্রীয়তা এক ছিল। এই রাষ্ট্রীয়তার ভিত্তি ছিল সনাতন ধর্ম। এই রাষ্ট্রীয়তার বন্ধন ছিল সাংস্কৃতিক বন্ধন। আমাদের দুর্ভাগ্য যে এই সত্যকে স্বীকার করার মত একজন সাহসী ও নিঃস্বার্থ রাষ্ট্রপুরুষকে এখনও দেশনেতা হিসেবে আমরা খুঁজে পাই নি, যিনি বুক চিতিয়ে ঘোষণা করবেন – এই দেশ হিন্দুর দেশ, ভারতবর্ষ হিন্দুরাষ্ট্র। তাই রাষ্ট্র সম্বন্ধে দেশবাসীর বিভ্রান্তি দূর করতে হবে। যে জাতি কে শত্রু আর কে মিত্র তা চিনতে পারে না, সেই জাতির ধ্বংস অনিবার্য। তাই জাতিকে শত্রু মিত্র চেনাতে হবে। আর এই হিন্দু রাষ্ট্রীয়তার পরিচয় দেশবাসীকে করাতে হবে।

No comments:

Post a Comment