Wednesday, March 4, 2015

আমরা ধর্মের নামে নিরন্তর অধর্ম করে চলেছি

ঈশ্বরভক্তিই যদি ধর্মের মাপকাঠি হয় তবে শিবভক্ত রাবণ সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ধার্মিক। কিন্তু রাবণ ছিলেন অধর্মের প্রতীক৷ ছলনা, কপটতামাত্রই যদি অধর্ম হয় তবে শ্রীকৃষ্ণ-র থেকে বড় অধার্মিক পৃথিবীতে আর জন্মগ্রহণ করে নি। অহিংসাই যদি পুণ্য হয় তবে রামচন্দ্র এবং শ্রীকৃষ্ণ মহাপাতক, মা দুর্গা এবং মা কালী পাপের দেবী। আধুনিক কালের ক্ষুদিরাম বোস, বিনয়-বাদল-দীনেশ, বাঘা যতীন, মাস্টারদা সূর্যসেন সকলেই ঘৃণার পাত্র। এই কথা গুলি সবাই জানেন যে কৃষ্ণস্তু ভগবান স্বয়ং, শ্রীরামচন্দ্র হলেন মর্যাদা পুরুষোত্তম এবং অসূরবংশ ধ্বংস করতেই মা দুর্গা ও মা কালীর আবির্ভাব৷ অর্থাৎ তাঁদের প্রদর্শিত পথই হল ধর্মের পথ৷ কিন্তু এই পথে চলার জন্য যে সাহস দরকার তা আমাদের মধ্যে নেই। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় এই যে, আমাদের এই দুর্বলতা স্বীকার করে নেওয়ার পরিবর্তে আমরা ধর্মের পরিভাষাকেই বদলে ফেলেছি৷ নিজেদের মত করে ধর্মের ব্যাখ্যা করে সমাজকে বিভ্রান্ত করে চলেছি৷ দুর্যোধনকে আমি শ্রদ্ধা করি এই কারণে যে তিনি মুক্ত কন্ঠে স্বীকার করেছিলেন - "জানামি ধর্মম্ ন চ মে প্রবৃত্তি, জানামি অধর্মম্ ন চ মে নিবৃত্তি"। অর্থাৎ ধর্ম কি, তা আমি জানি। কিন্তু আমার তাতে প্রবৃত্তি নেই। আর অধর্ম কি, তাও আমি জানি কিন্তু তা থেকে নিজেকে নিবৃত্ত করার ক্ষমতা আমার নেই। কিন্তু আমরা ধর্মের নামে নিরন্তর অধর্ম করে চলেছি। অধর্মকে প্রশ্রয় দিয়ে চলেছি। অপেক্ষা করে চলেছি ভগবানের কোন এক অবতারের আবির্ভাবের জন্য, যিনি এসে অধর্মের বিনাশ করবেন। আসলে ভগবান এখন আবির্ভূত হলে আমাদের মত অধার্মিকদের বিনাশ প্রথমে করবেন। যেমন করেছিলেন দেবাদিদেব মহাদেব। দক্ষরাজের অন্যায় মুখ বুজে সহ্য করছিল সকলে। নীরব দর্শক, আমাদের মত। ভগবান শিব দক্ষরাজকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হন নি। সতীর মৃতদেহ সাথে নিয়ে প্রলয় শুরু করলেন এই অন্যায় কে প্রশ্রয়্দানকারী সমগ্র সৃষ্টিকে ধ্বংস করার জন্য। তাই কবি বলেছিলেন, "অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে, তব ঘৃণা যেন তারে তৃণসম দহে"। আজকে দেগঙ্গা, নলিয়াখালী, উস্তি, নৈহাটিতে হিন্দুদের উপর অত্যাচার দেখেও আমরা নীরব। সামান্য মৌখিক প্রতিবাদ করা থেকেও আমরা বিরত। আমাদের ভগবান ক্ষমা করবেন না। শতবার ঘন্টা বাজিয়ে হাজার হাজার নামজপ করলেও নয়।

No comments:

Post a Comment