Friday, March 6, 2015

ধর্ষণে অভিযুক্ত শরিফুদ্দিনকে জেল থেকে ছিনিয়ে নিয়ে মৃত্যুদন্ড দিল জনতার আদালত

ধর্ষণে অভিযুক্ত শরিফুদ্দিনকে জেল থেকে ছিনিয়ে নিয়ে মৃত্যুদন্ড দিল জনতার আদালত৷ গত ৫ ই মার্চ নাগাল্যান্ডের ডিমাপুর শহরের ঘটনা৷ অভিযোগ, গত ২৪ ফেব্রুয়ারী ডিমাপুরের এস ডি জৈন কলেজের এক ছাত্রীকে মাদকদ্রব্য খাইয়ে দফায় দফায় ধর্ষণ করে এই শরিফুদ্দিন৷ ধর্ষিতার অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ গ্রেপ্তার করে শরিফুদ্দিনকে৷ ওই দিনই ডাক্তারী পরীক্ষা হয় মেয়েটির৷ ৫ দিন পুলিশ হেপাজতের পর জেল হাজতে পাঠানো হয় অভিযুক্তকে৷
এই পর্যন্ত ঘটনার মধ্যে কোন বৈচিত্র নেই৷ আমাদের রাজ্যে এরকম ঘটনা আকছাড় হচ্ছে এবং সেগুলোর খবর অভিযুক্ত জেলে যাওয়ার পরেই ধামাচাপা পড়ে যায়৷ শেষ পর্যন্ত দোষীদের কি পরিণতি হল কেউ তার খোঁজ রাখে না৷ কামদুনীর ঘটনায় অভিযুক্তদের বিচারের কারেন্ট স্টেটাস কি, তার খবর ক'জন জানে? বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই জামিন পেয়ে যায় অপরাধীরা৷ সে খবর কোথাও ছাপা হয় না৷ কিছু কিছু ক্ষেত্রে শাস্তি হলেও তা হয় কয়েক বছর জেল খাটার শাস্তি, বড়জোর যাবজ্জীবন৷ তাতে ধর্ষিতার প্রতি সুবিচার করা হল বলে অনেকে মনে করতে পারেন৷ কিন্তু এতে ধর্ষকের অপরাধবোধ বা অনুশোচনা বিন্দুমাত্র হয় বলে আমি মনে করি না৷ আমি যে সঠিক, তার প্রকৃষ্ট প্রমাণ নির্ভয়া কান্ডে ধৃতদের একজনের সাক্ষাৎকার, যা নিয়ে এখন গোটা দেশ তোলপাড়৷ তাছাড়া আমার মতে এই শাস্তি হল গুরু পাপে লঘুদন্ড৷ এই শাস্তির ভয় ধর্ষণকারীদের নিবৃত্ত করবে বলে যারা মনে করেন, তারা মূর্খের স্বর্গে বাস করছেন৷ কারণ দুর্নীতির জমানায় জেলখানা যে আর কষ্টের জায়গা নয়, যাদের সামান্য অভিজ্ঞতা আছে তারা জানেন৷ আর টাকা এবং রাজনৈতিক ক্ষমতার জোরে জামিন নিয়ে বুক ফুলিয়ে বাইরে ঘুরে বেড়ানো আজ বিশেষ কঠিন কাজ নয়৷ তাই সহজ কথায় বলতে পারি যে যতক্ষণ পর্যন্ত দুর্নীতিকে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত  বর্তমান বিচার ব্যবস্থায় অপরাধীকে উপযুক্ত শাস্তিও দেওয়া সম্ভব নয় এবং সমাজকে অপরাধমুক্ত করাও সম্ভব নয়৷
এই নিরাশা যে শুধু আমার নয়, এযে গোটা দেশের তা প্রমাণ করল নাগাল্যান্ড৷ দেশের আইন, বিচার ব্যবস্থার প্রতি চরম অনাস্থা থেকে উদ্ভুত ক্ষোভ সেদিন অমানুষ, নৃশংস পশুতে পরিণত করে তুলল লাজুক, নম্র কিন্তু স্বাভিমানী নাগা মানুষগুলোকে৷ জেল থেকে ছিনিয়ে নিয়ে তারা নৃশংসভাবে হত্যা করল ধর্ষককে৷ শরিফুদ্দিনকে প্রকাশ্য রাস্তায় ফাঁসী দিয়ে ফেটে পড়ল পৈশাচিক উল্লাসে৷ এই ঘটনায় বিশ্বমানবতা কতটা সংকটগ্রস্ত হল তা হয়তো মানবতাবাদের ধ্বজাধারীরা বলতে পারবেন৷ তবে আমি এইটুকু হলফ করে বলতে পারি যে আগামী কয়েকটা বছর নাগা মহিলারা এতটা সুরক্ষিত অনুভব করবেন যা দেশের কোন ফৌজ তাঁদের কোনদিন দিতে পারে নি বা পারবে না৷ আর এই শরিফুদ্দিনরা নাগা মেয়েদের দিকে কয়েক বছর চোখ তুলে তাকাতেও ভয় পাবে৷
ঘটনাটা সম্পর্কে বোদ্ধারা অনেক মতামত অবশ্যই দেবেন, দেওয়া শুরুও করেছেন৷ তবে যেটা ঘটেছে সেটা ঠিক না ভুল সে সম্পর্কে যারা ঠান্ডা ঘরে বসে তাদের বেদ-পুরাণ উল্টে পাল্টে বিচার করে মতামত দিচ্ছেন, তাদের মতামতের তুলনায় আমার কাছে নির্ভয়া এবং কামদুনীর শিপ্রার আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের মতামত অনেক বেশী দামী৷ নির্ভয়া, শিপ্রাদের মানবিক অধিকারকে যারা পশুর মত ছিঁড়ে খায়, তাদের সাথে কিসের মানবিক ব্যবহার? সর্বোপরি নাগারা তাদের সমাজের একটি মেয়ের সম্ভ্রমহানীতে যেভাবে পাগল হয়ে উঠেছে তা অনুসরণ যোগ্য৷ এই সংবেদনশীলতা আমাদের সমাজে সঞ্চারিত হোক-ভগবানের কাছে এই প্রার্থনা করি





No comments:

Post a Comment